প্রতিনিধি চাঁদপুর
‘জামাই-শ্বশুরের’ চায়ের দোকানে চা পান করতে আসেন নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলেজ গেইট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কবির হোসেন (৩৬) ও তাঁর শ্বশুর সোলেমান মোল্লা (৫৫) মিলে বছর পাঁচেক আগে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দেন। জামাতা-শ্বশুরের যৌথ অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় চলছে চায়ের দোকানটি। দুজনে মিলে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি করেন প্রায় ৩০০ কাপ দুধ-চা। প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টাকার চা বিক্রি হয় দোকানটিতে।
নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিন এখানে ‘খাঁটি দুধের চা’ পান করতে আসেন। গাভীর দুধ দিয়ে জামাতা-শ্বশুরের হাতের পরম যত্নে বানানো সুস্বাদু ওই দুধ-চা স্থানীয় লোকজনের কাছে বেশ সমাদৃত। দূর থেকেও অনেকে আসেন চা–পান করতে। স্থানীয়ভাবে এটি ‘জামাই-শ্বশুরের’ চায়ের দোকান হিসেবে পরিচিত। দোকান থেকে উপার্জিত আয় দিয়েই চলছে তাঁদের সংসার।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলেজগেট এলাকায় চায়ের ওই দোকানের অবস্থান। জামাতা কবির হোসেনের বাড়ি উপজেলার পৈলপাড়া গ্রামে। কবিরের শ্বশুর সোলেমান মোল্লার বাড়ি উপজেলার নবকলস গ্রামে।
সম্প্রতি এক সকালে ওই চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। ছোট্ট পরিসরে সাজানো টুল-টেবিলে বসে চা–পান করতে করতে আড্ডা দিচ্ছেন তাঁরা। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তর্ক চলছে সেখানে। ক্রেতাদের চা পরিবেশনায় ব্যস্ত শ্বশুর-জামাতা।
কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। কবির হোসেন বলেন, তাঁর একমাত্র শ্যালক মানসিক প্রতিবন্ধী। তাঁর শ্বশুরের আর কোনো ছেলে না থাকায় তাঁকেই (কবির) ছেলে মনে করেন তিনি। তাঁর বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। এ জন্য শ্বশুরকেই বাবার আসনে বসিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে দুজনে মিলে ভাড়া করা এই চায়ের দোকানটি দিয়েছেন। নিজে সাতটি গাভী পালনপালন করেন। ওই গাভীর দুধ দিয়ে চা তৈরি করে বিক্রি করেন তাঁরা। তিনি ও তাঁর শ্বশুর পালা করে দোকানে বসেন এবং চা বিক্রি করেন। উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও চাঁদপুর জেলা শহর ও মতলব উত্তর উপজেলা থেকেও লোকজন এই দোকানে আসেন চা–পান করতে।
ক্রেতাদের হাতে দুধ-চা তুলে দিচ্ছেন কবির হোসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কবিরের শ্বশুর সোলেমান মোল্লা বলেন, প্রতিদিন গড়ে তাঁদের দেড় হাজার টাকার বেশি লাভ থাকে। ওই টাকায় তাঁর ও জামাতার সংসারের খরচ চলে। চা বিক্রি করে দুই পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতাও। আরও বড় আকারে দোকান করে চা বিক্রির পরিকল্পনা আছে তাঁদের।
মতলব সরকারি কলেজের শিক্ষক অশোক কুমার রায় জানালেন, তিনিসহ তাঁর কলেজের অনেক শিক্ষক প্রায় প্রতিদিন এখানে আসেন চা–পান করতে। খাঁটি দুধ দিয়ে বানানো চায়ের স্বাদই আলাদা। শুধু দুধ, চিনি বা লিকার নয়; মনোযোগ, দরদ ও আন্তরিকতা তাঁদের বানানো চায়ে। এ জন্য এই চা অন্য চা থেকে আলাদা, স্বাদে ভিন্ন।
দোকানটিতে বসা উপজেলার বহরীয়া এলাকার অটোরিকশাচালক হাসান ইমাম বলেন, ‘এক কাপ দুধ-চা খাওয়ার লইগা প্রায়ই ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূর থেইকা এখানে আসি। আরও অনেকেই এখানে চা খাইতে আসেন। এখানকার চা মজাদার।’