প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

হিজড়া খালের যে স্থানে পড়ে ছয় মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছিল সে এলাকা পরিদর্শন করেন দুদকের কর্মকর্তারা। আজ দুপুরে | ছবি: দুদক থেকে পাওয়া

হিজড়া খালে পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গাফিলতি রয়েছে কি না, তা তদন্তে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার সংস্থাটি সিটি করপোরেশন ও সিডিএতে অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়া নগরের হিজড়া খালের যে উন্মুক্ত স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাটি পড়ে গিয়েছিল, সে স্থানও পরিদর্শন করেছে দুদকের দল।

২১ এপ্রিল নগরের খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থার এক কর্মকর্তা।

১৮ এপ্রিল রাত আটটার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশুসহ তিনজনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা ও দাদি খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খালে সেহরিশ নামের শিশুটির নিথর দেহ পাওয়া যায়।

দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিটি করপোরেশন ও সিডিএ নগরের নালা ও খাল যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সংগ্রহ করা হয় প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র।

এ ছাড়া নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে দুদকের দল। অভিযানে যাওয়া দুদকের কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) যে নিরাপত্তাবেষ্টনী বা রেলিংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, পরিদর্শনে গিয়ে মূল কাজের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায়নি। আরও কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে।

এদিকে সার্বিক বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করেন দুদক কর্মকর্তারা। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দুদককে জানান, ১৮ এপ্রিল হিজড়া খালে পড়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করপোরেশনের সচিবকে প্রধান করে চার সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সিডিএতে অভিযান চালায় দুদক। এ সময় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন দুদক কর্মকর্তারা। আজ দুপুরে | ছবি: দুদকের কাছ থেকে পাওয়া

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সিডিএ ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, খালে পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সিটি করপোরেশন ও সিডিএর কোনো দায়দায়িত্ব আছে কি না, তা যাচাই করছেন তাঁরা। সিডিএর প্রকল্পে ৩৬টি খালের মধ্যে ১৯টির কাজ শেষ হয়েছে। তবে যে হিজড়া খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সিডিএ মাত্র কাজ শুরু করেছে। এখনো শেষ হয়নি। আর যেসব খালে কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে রেলিং (নিরাপত্তাবেষ্টনী) দেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ কেন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর প্রকল্পের নথিপত্র পর্যালোচনা করে কমিশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

সিডিএর চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, খালে পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দুদক খুবই উদ্বিগ্ন। দুদক জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বিষয়ে কিছু তথ্য চেয়েছে। তা দেওয়া হয়েছে। আর যে খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সিডিএ এখনো কাজ শুরু করেনি। আর যেসব খালে কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়েছে কি না, জানতে চেয়েছে। যেসব খালে কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হিজড়া খাল সিডিএর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী সেখানে বাঁশের বেষ্টনীর ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার এক বা দুদিন আগে সেখানে এক্সকাভেটর বা খননযন্ত্র নামাতে গিয়ে বাঁশের বেষ্টনী ভাঙতে হয়েছে। এরপর দুর্ঘটনা ঘটেছে।