সরাফ আহমেদ হ্যানোভার, জার্মানি থেকে
![]() |
কবি দাউদ হায়দার | ছবি: কবির পরিবারের সৌজন্যে |
জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশের কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন। গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় রাত নয়টায় বার্লিনে শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি বার্লিনের রাইনিকেডর্ফ এলাকায় একটি ভবনের ১২ তলায় একটি ফ্লাটে একাকী বসবাস করতেন।
দাউদ হায়দার গত ১২ ডিসেম্বর নিজ বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। দুর্ঘটনার দিন প্রথমে স্থানীয় রাইনিকেডর্ফ হাসপাতালে, পরে নয়েকোলন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়। সেই সময় কবির পরিচিত মাইন চৌধুরীকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তিনি সম্ভবত পড়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই সময় দাউদ হায়দারকে দুই সপ্তাহ হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল এবং কৃত্রিম উপায়ে নলের সাহায্যে খাবার খাওয়ানোর ও শ্বাসপ্রশ্বাসের চেষ্টা করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাউদ হায়দারের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে এবং জ্ঞান ফিরলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না। পরে তাঁকে ‘কৃত্রিম কোমা’ থেকে সাধারণ কোমায় রাখা হয় এবং তাঁর শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।
গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে কবি দাউদ হায়দারকে বার্লিন থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রাইফভাল্ডার শহরে নিউরোলজি বা স্নায়বিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা তখন জানিয়েছিলেন, সেখানে তাঁকে অনেকটা সময় থাকতে হবে।
কিছুটা সুস্থ হয় উঠলে দাউদ হায়দারকে গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বার্লিনের শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে স্থানান্তরিত করা হয়। গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে এই ক্লিনিকেই তিনি মারা যান। দাউদ হায়দারের মারা যাওয়ার পরপরই শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকের চিকিৎসক কবির এই মৃত্যুসংবাদ মাইন চৌধুরীকে ফোন করে জানান।
বার্লিন ও জার্মানিতে কবির প্রবাসী বন্ধুরা নিয়মিত তাঁর খোঁজখবর রাখছিলেন। খুব সম্ভবত কবি দাউদ হায়দারের মরদেহ বার্লিনেই দাফন করা হবে।
হাসপাতালের শয্যায় অসুস্থ অবস্থায় কবি দাউদ হায়দার | ছবি: সরাফ আহমেদ |
সত্তরের দশকের শুরুর দিকে দাউদ হায়দার দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ নামের একটি কবিতা লেখার ‘অপরাধে’ ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য মামলা করা হয়। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
পরে ১৯৭৪ সালের ২১ মে দাউদ হায়দারকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রথম তিনি ১৩ বছর কলকাতায় ছিলেন। পরে জার্মানির নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় ১৯৮৬ সালের ২২ জুলাই জার্মানি এসে পৌঁছান। তখন থেকেই তিনি জার্মানির বার্লিন শহরে বসবাস করে আসছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দাউদ হায়দারই প্রথম লেখক, যাঁকে লেখালেখির কারণে নির্বাসনে যেতে হয়। ৫০ বছর ধরে কবি দাউদ হায়দার নির্বাসনে ছিলেন। এই সময়ে তিনি আর কখনোই দেশে যেতে পারেননি। বাংলাদেশের কোনো সরকার এই কবিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
কবি দাউদ হায়দারের জন্ম ১৯৫২ সালে পাবনার দোহারপাড়া গ্রামে।