প্রতিনিধি বাগেরহাট

উদ্ধার তিন শ্রীলঙ্কার নাগরিক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাগেরহাটের মোল্লাহাট থেকে উদ্ধার হওয়া তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছিলেন অপহরণকারীরা। তাঁরা শ্রীলঙ্কায় তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে মুক্তিপণের জন্য টাকাও দাবি করেন। অপহরণকারীরা টাকা চেয়ে ব্যাংক হিসাবের তথ্যও পাঠিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশ সরকারকে পাঠানো চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার ঢাকার শ্রীলঙ্কান হাইকমিশন থেকে অপহরণের তথ্য জানানোর পর গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো জিম্মি তিন বিদেশি নাগরিককে উদ্ধারে কাজ শুরু করে।

সূত্র বলছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ী নেহাল আনন্দ মালাভি পাথিরানা ও তাঁর স্ত্রী তিলি টিকিরি কুমারীহামাই ঢাকায় আসেন। বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ আমবাড়ি এলাকার শহিদুল শেখের ব্যবসায়িক আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসেন তাঁরা। বিমানবন্দর থেকে পাথিরানা ও কুমারীহামাইকে নিয়ে শহিদুল শেখ মোল্লাহাটের দক্ষিণ আমবাড়ি গ্রামে আসেন। সেখানে তাঁর সহযোগী জনি শেখের বাড়িতে ওই দুই শ্রীলঙ্কানকে আটকে রাখা হয়। ওই বাড়িতে নীল থুপ্পী মুডিয়ানসিলা নামের আরও এক শ্রীলঙ্কানকে আগে থেকেই আটকে রাখা হয়েছিল।

এ তথ্য উদ্‌ঘাটনের পর বুধবার রাত ১২টার দিকে গোয়েন্দা সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। তারা জিম্মিদশা থেকে তিন শ্রীলঙ্কানকে উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করে। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরেকজনকে আটক করে পুলিশ।

উদ্ধার শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের নিজ কার্যালয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন খুলনার রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক। বৃহস্পতিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঘটনাস্থল থেকে আটক ব্যক্তিরা হলেন দক্ষিণ আমবাড়ি এলাকার সেরাত কাজীর ছেলে কাজী এমদাদ হোসেন (৫২), সবুর শেখের ছেলে শহিদুল শেখ (২৪) এবং গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাটিয়াগড় গ্রামের জাকির শেখের ছেলে জনি শেখ (৩৮)। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক ব্যক্তির নাম শেখ সামছুল আলম। সামছুল মোল্লাহাট উপজেলার চরকুলিয়া গ্রামের শেখ শাহবুদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ বলছে, এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের আরও কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ী নেহাল আনন্দ মালাভি পাথিরানা বলেছেন, তাঁদের জিম্মি করে পাঁচ লাখ ডলার মুক্তিপণ দবি করা হয়েছিল।

এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ। তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে শ্রীলঙ্কান তিন নাগরিককে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়।

তিন বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই শ্রীলঙ্কানদের ব্যবসার কথা বলে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান আটক ব্যক্তিরা। জিম্মি করার পর শ্রীলঙ্কায় তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে বলা হয়, তাঁদের অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ না দিলে ছাড়া হবে না।