প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আগুনে বাড়িটির চারটি ঘর পুড়ে যায়। গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে | ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় ‘অসামাজিক কার্যকলাপের’ অভিযোগে এক নারীর বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আগুনে বাড়ির চারটি পাকা ঘর এবং পাশের তাঁর জামাতার টিনের চাল ও টিনের বেড়ার বাড়িটিও পুড়ে যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। একই সময় ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দল গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইস উদ্দিন বলেন, বাড়িটি বোয়ালিয়া ইউনিয়ন ও ভোলাহাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী স্থানে কিছুটা নির্জন এলাকায় অবস্থিত। ওই নারীর বিরুদ্ধে বাড়িটিতে মেয়েদের রেখে পতিতাবৃত্তি ও মাদক ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই দুই ইউনিয়নের কয়েকটি মসজিদের মুসল্লিরা ওই নারীকে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য একাধিকবার বলেন। কিন্তু তিনি নিষেধ না শুনে কার্যকলাপ চালিয়ে যান। এর জেরে বুধবার রাতে দুই ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার উত্তেজিত মানুষ একত্রিত হয়ে বাড়িতে আগুন দেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় এসে কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান ওসি।

বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সদস্য ফেরদৌসি বেগম ওই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই নারীর অসামাজিক কার্যক্রমের জন্য আলমপুর ও পার্শ্ববর্তী ভোলাহাট উপজেলার দলদলি ইউনিয়নের দলদলি গ্রামের লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন। গ্রামের লোকজন একাধিকবার তাঁকে অসামাজিক কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য সতর্ক করেন। কিন্তু তিনি এতে সাড়া দেননি। লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনওর কাছে গিয়েও অভিযোগও করেন। এতে কাজ না হওয়ায় দুই গ্রামের লোকজন এক হয়ে বাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে ওই নারী বলেন, দুই বছর আগে তাঁর ছয় বছর বয়সী এক স্বজনকে ধর্ষণ করে আলমপুর গ্রামের মহসিন আলীর ভাতিজাসহ দুজন। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেন। এ কারণে মহসিনসহ আরও লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন।

অসামাজিক কাজের অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই উল্লেখ করে ওই নারী আরও বলেন, তারা চেয়ারম্যান, পুলিশ, ইউএনও কাছেও অভিযোগ করেছিল। এগুলোর তদন্ত হচ্ছে। এর আগেই তারা বাড়ি পুড়িয়েছে। তিনি মেয়ের কাছে তাঁর আলমারিতে ঋণের ১০ লাখ টাকা রেখেছিলেন। সেটা নিয়ে গেছে। পাঁচনরি সোনার গয়না ছিল, সেটাও নিয়ে গেছে। মহসিন মিয়া ও নজরুল মেম্বারের নেতৃত্বে মানুষ আগুন দিয়েছে। এর আগে মহসিন  মাইকিং করে তাঁর বিরুদ্ধে মিটিংও করেছেন।

এ ব্যাপারে মহসিন আলী বলেন, ওই নারীকে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপ ছেড়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের মুরব্বিরা বলতে যান। তখন তিনিও সঙ্গে ছিলেন। এ জন্য ওই নারী তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত তাঁর ভাতিজা নয়, প্রতিবেশী। অন্য অভিযুক্ত ১০-১২ বছর বয়সী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করাই তাঁর উদ্দেশ্য। এই এলাকার একটা লোকও তাঁকে সমর্থন করে না। মাইকিং করে মিটিং হয়েছে ভোলাহাটের দলাদলি গ্রামে। চার-পাঁচটি গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ নিয়ে বিচার সালিসও হয়েছে।

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত আনজুম বলেন, ‘মঙ্গলবার এলাকার লোকজন এসে এ ব্যাপারে (অসামাজিক কাজ) মৌখিকভাবে অভিযোগ করে। আমি গোমস্তাপুর থানা–পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলি। আগুন দেওয়ার কথা শুনেছি।’

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) রেজাউল করিম বলেন, যাঁরা এগুলো করে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন, তাঁরা অন্যায় করেছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।