প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
![]() |
বিজু উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে অপহৃত হন এই পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী | ছবি: সংগৃহীত |
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরও উদ্ধার করা যায়নি। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অপহৃত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
অপহরণের শিকার দিব্যি চাকমার মা ভারতী চাকমা গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘প্লিজ, মায়ের বুক খালি করবেন না। সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি। ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের।’
অপহরণের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা–সমর্থিত) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছে। পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা বলেন, ‘পিসিপি চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা ও তাঁর চার বন্ধুকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। ইউপিডিএফ–প্রসীত পক্ষ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আমরা তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। একই সঙ্গে তাঁদের সুস্থ অবস্থায় মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
রিশন চাকমা ছাড়া অপহরণের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘পাহাড়ের আঞ্চলিক একটি সংগঠন এতে জড়িত থাকতে পারে। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভুবন চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপহরণের ঘটনা মানবাধিকার পরিপন্থী। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীকে অতি দ্রুত সুস্থ শরীরে মুক্তির দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। পাশাপাশি তাঁদের উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানানো হয়।
তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের অন্যতম জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, ‘অপহরণের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সব সময় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের পক্ষে।’
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপহৃত শিক্ষার্থীরা বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বিজু উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তাঁরা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় তাঁরা খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছু দূরে পানছড়ি খাগড়াছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত যাপন করেন। গতকাল সকালে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামের এক জায়গায় তাঁদের অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণ করা হয় অটোরিকশাচালককেও। তবে পরবর্তী সময়ে অটোরিকশাচালককে ছেড়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার পর এখন পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।