প্রতিনিধি রাজশাহী

মাকে বাঁচাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারিফ হাসান ফেসবুকে নিজের শিল্পকর্ম বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন | ছবি : ফেসবুক থেকে নেওয়া

তারিফ হাসান ওরফে মেহেদীর মা জাহানারা বেগম (৫৫) ২০১৪ সাল থেকেই অসুস্থ। ২০২২ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে কথা বলা, চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বিছানায় শায়িত সেই মা এবার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মাকে বাঁচাতে এবার নিজের শিল্পকর্ম ফেসবুকে বিক্রির ঘোষণা দিলেন তারিফ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারিফ হাসান মেহেদী চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনা সদরের ইসলামপুর গ্রামে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। গত বছরের জুলাইয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত বাবা বকুল মিয়া মারা যান। এর কয়েক মাস পর তাঁর পরিবারের বড় ভাই শাহিন মিয়াও মারা যান। বাবার দেখভাল ও চিকিৎসা চালাতে গিয়ে মাস্টার্স পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি তারিফের। তারিফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুসভার ২০২০ সালের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ২০২১ সালের কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তারিফ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাঁর নিজের শিল্পকর্মের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘আমার আম্মাকে বাঁচাতে দয়া করে এগিয়ে আসুন। আজ সকল লজ্জা, ইতস্ততা ভাঙলাম। সারা জীবন মানুষের উপকার করে আজ নিজের উপকারের জন্য আপনাদের কাছে হাত পেতে অনুরোধ করছি। আমার আম্মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।’

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারিফ আরও লিখেছেন, ‘কি ভাগ্য আমার! গত বছরের ১৪ জুলাই বাবা ও ৬ নভেম্বর বড় ভাইকে হারিয়েছি। ক্যানসার আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখনো ৩৮০০০ টাকার মতো ঋণে জর্জরিত আছি, যা পরিবারের কাউকে বলিনি তাদের চিন্তা হবে। আম্মা ২০১৪ সাল থেকে অসুস্থ। এর মধ্যে ২০২২ সালে ব্রেইন স্ট্রোক করে কথা বলা, চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিছানায় শায়িত একটা মানুষকে প্রতিনিয়ত দেখাশোনা করা, চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা এসব করতে করতে আজ আমরা অসহায়। গতকাল আম্মা আবার হার্ট স্ট্রোক করেছেন। জানি না আল্লাহ একটা মানুষকে এভাবে কেন কষ্ট দিচ্ছেন। এখন দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করানো দরকার, যার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। ২০১৬ থেকে আম্মার মেডিসিন অন্যান্য মেডিকেল টেস্ট বাবদ ঋণ লাখ টাকার ওপরে।’

নিজের শিল্পকর্ম বিক্রির ঘোষণা দিয়ে তারিফ বলেছেন, ‘আমার আম্মাকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন। ডাক্তার বলছেন ৪৩ শতাংশ হার্ট ব্লক হয়ে গিয়েছে। আপনারা আমার এই শিল্পকর্মগুলো কিনে আমার পাশে থাকুন, আমাকে সহযোগিতা করুন। নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে কিনতে চাইলেও কিনুন।’

তারিফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারিফরা চার ভাই ও তিন বোন। থাকেন নেত্রকোনা জেলা সদরের একটি গ্রামে। বাবা বকুল মিয়া মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। গত বছর হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পরীক্ষায় তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। তখন বাবার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এতে তখনই তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর কয়েক মাস পর পরিবারের ভরসা হয়ে ওঠা বড় ভাই শাহিন মিয়া হঠাৎ হৃদ্‌রোগে মারা যান। এতে তাঁদের পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আর তাঁর মা ২০১৪ সাল থেকেই অসুস্থ। ২০২২ সালে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকেই মায়ের চিকিৎসায় খরচ হয়ে আসছে। হঠাৎ এই অসুস্থতার মধ্যেই গত শনিবার তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। এখন তাঁদের চিকিৎসার মতো কোনো টাকাপয়সা নেই। এ কারণে নিজের কাছে থাকা শিল্পকর্ম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তারিফ বলেন, বাবার অসুস্থতার কারণে তাঁকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করায় মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে পারেননি। তিনি আবার মাস্টার্স করছেন। এরই মধ্যে তাঁর মা আবার গুরুতর অসুস্থ হলেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর শিল্পকর্ম সন্তানের মতো। নিজের মায়ের চিকিৎসায় এগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।