নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

রংপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির খুদে শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি দলীয় নৃত্য। রংপুর জিলা স্কুল চত্বরে আজ সোমবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নতুন সূর্যের প্রথম আভা গায়ে মেখে বাংলা সনের প্রথম দিনে বৈচিত্র্যময় আবহে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। বাঙালির প্রাণের উৎসব ছড়িয়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। উৎসবের রঙে নিজেদের রাঙিয়েছেন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও।

শোভাযাত্রা, লোকজ সংস্কৃতি, গান, নাচ, আবৃত্তি—কী ছিল না এসব আয়োজনে! গ্রামগঞ্জে বসেছে বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী মেলা। তাতে দল বেঁধে যাচ্ছেন নারী, পুরুষ, শিশুরা। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ লাঠিখেলা ও হাডুডু দেখতেও ভিড় কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আয়োজন করা হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানের। জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে নতুন বছরকে বরণ করতে ছিল নানা আয়োজন।

বৈশাখের আয়োজনে আসা এই মানুষেরা বলছেন, গত বছর (১৪৩১ সন) বাংলাদেশের মানুষ অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখেছেন। নতুন বছর ১৪৩২–এ এসে একটি চমৎকার সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চান তাঁরা। যেখানে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ দলমত–নির্বিশেষে আনন্দে থাকবেন।

বর্ষবরণের আয়োজন নিয়ে খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিবাদের প্রতীক মুষ্টিবদ্ধ হাত, শান্তির প্রতীক জোড়া পাখি নিয়ে বৈশাখী শোভাযাত্রা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো কলাভবন এলাকা থেকে বৈশাখী শোভাযাত্রা বের করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের অনেকে রংবেরঙের মুখোশ পরে নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

মুষ্টিবদ্ধ হাত, শান্তির প্রতীক জোড়াপাখি নিয়ে বৈশাখী শোভাযাত্রা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে গতকাল রোববার চৈত্রসংক্রান্তি ও আজ পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ছিল পান্তা ভোজন, প্রভাতের গান, প্রাক্তনী: প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা, লোকখেলা, ভেন্ট্রিলোকুইজম, সঙ-সারিক, অন্তর বাদন, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য-রামায়ণ গান। দুই দিনের আয়োজনের প্রথম দিন গতকাল লাঠিখেলা, ব্যাঙের পান-চিনি, জলরং খেলাসহ বিভিন্ন আয়োজন ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং, ক্যানটিন ও দোকানগুলোতে বকেয়া টাকা আদায়ে ক্যাম্পাসের বটতলায় আজ সকালে প্রতীকী হালখাতার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা-কর্মীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট আলাদাভাবে শোভাযাত্রা বের করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে প্রশাসন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। এবারের শোভাযাত্রায় চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে গ্রামীণ ও লোকজ সংস্কৃতি এবং ফিলিস্তিন ইস্যুর বিভিন্ন মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।শোভাযাত্রায় বাউল, বর-নববধূ, কৃষকসহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হন শত শত শিক্ষার্থী।

শোভাযাত্রাগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিজ নিজ আয়োজনে অংশ নেয়। এসব আয়োজনে ছিল কবিতা আবৃত্তি, লোকসংগীত পরিবেশনা, গ্রামীণ মেলা ও পান্তা-ইলিশ।

নেচে-গেয়ে বর্ণিল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘একটি দিবস বা উৎসব সামনে রেখে আমরা একত্র হই। এতে সামাজিক পরিসরের ভাব আদান-প্রদান ও পরিচয় শক্তিশালী হয়। এর প্রভাব জাতীয় জীবনে পড়ে। তেমনি বাংলা নববর্ষ আমাদের পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে।’

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

পাঁচ বছর পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শোভাযাত্রা শেষে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেশীয় নানা সংস্কৃতি নিয়ে লোকজ অনুষ্ঠান ও পরবর্তী সময়ে বেলা তিনটায় মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের করা হয়। সিলেট, ১৪ এপ্রিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মাছ, তরমুজ, ডাকটিকিটের বক্স, হাতপাখাসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যের প্রতীক নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা। কয়েক দিন ধরেই শিক্ষার্থীরা এসব প্রস্তুত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে এ আয়োজন অনন্য হয়ে থাকবে। আমরা জাতিসত্তার বিকাশধারায় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রেখে সামনে পথ চলতে চাই।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বৈশাখের আগমনের এই দিনে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মসূচি। সকাল সাতটায় ক্যাম্পাসের কেআর মার্কেট থেকে বৈশাখী চত্বর পর্যন্ত শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের আয়োজন। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সাজপোশাক, মুখোশ ও শিল্পসামগ্রীর বাহারে রঙিন হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। শোভাযাত্রার পর বৈশাখী চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশুদের পরিষ্কার হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শিশু-কিশোর কাউন্সিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

শোভাযাত্রা শেষে বৈশাখী চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা সংঘ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত সংঘ, সাহিত্য সংঘ ও শিশু-কিশোর কাউন্সিলের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠানে নৃত্য, গান, আবৃত্তি ও নাটকের মধ্য দিয়ে বাংলা সংস্কৃতির বহুমাত্রিক রূপ তুলে ধরা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে শিশুদের পরিষ্কার হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শিশু-কিশোর কাউন্সিল। পরে উপস্থিত সবার জন্য বালিশ খেলার আয়োজন করে মহিলা সংঘ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দেশ ও জাতির কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদ, কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির আয়োজনে নিজ নিজ কর্মচারী ক্লাব মাঠে হাডুডু খেলার আয়োজন করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

সকাল সোয়া সাতটায় ‘এসো হে বৈশাখ এসো, এসো…’ গানের তালে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাড়ে নয়টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে লোকজ মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য মো. রেজাউল করিম। সকাল সাড়ে ১০টায় ক্যাম্পাসের মধ্যেই আনন্দ শোভাযাত্রা হয়। শোভাযাত্রাটি খেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার খেলার মাঠে গিয়ে শেষ হয়। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বর্ষবরণের এসব কর্মসূচির মধ্যে আছে সাপখেলা, লাঠিখেলা, পুতুলনাচ, ম্যাজিক শোসহ নানা লোকজ অনুষ্ঠান।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বের হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। এটি ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শোভাযাত্রা শেষে বক্তব্যে উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈচিত্র্যের দেশ। আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি। বাংলা নববর্ষ আমাদের ঐতিহ্য, যা সবাইকে একতাবদ্ধ করে।’ এ সময় তিনি নতুন বছরে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

রাজশাহী

রাজশাহীতে গান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনে উদ্‌যাপন করা হচ্ছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। আজ ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে ফুদকিপাড়ায় রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চে সাংস্কৃতিক প্রভাতি যন্ত্রসংগীতের মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু করে। পরে একে একে গান পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন রাজশাহী শাখা, ধ্রুপদালোক ও ইলা মিত্র শিল্পী সংঘ রাজশাহী।

রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায় রাজশাহী কলেজ বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রাজশাহী শিশু একাডেমি থেকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে শোভাযাত্রা বের হয়। রাজশাহী কলেজ বড় ধরনের শোভাযাত্রা বের করে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে। রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদের আয়োজনে আবৃত্তি, গান, নৃত্য পরিবেশন করা হয়েছে। রাজশাহী থিয়েটারের আয়োজনে বিকেলে নগরের আলুপট্টি মোড়ে আলকাপ গান, পটের গান, আদিবাসী নৃত্য, অভিনয় অনুষ্ঠান ছিল। বাঘার পরীগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবছরের মতো আলোচনা সভা, লাঠিখেলা, নাটকের আয়োজন করা হয়েছে।

খুলনা

সকাল সাড়ে আটটায় খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরের রেলস্টেশন রোড থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। প্রশাসনের উদ্যোগে হাদিস পার্কে আয়োজন করা হয়েছে লোকজ মেলার। দিনব্যাপী চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

খুলনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা করা হয়। পাওয়ার হাউজ মোড়, খুলনা, ১৪ এপ্রিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নববর্ষের কর্মসূচি অনুযায়ী, জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও সরকারি শিশু পরিবার, এতিমখানাগুলোতে ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবার পরিবেশন এবং শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া জেল কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যের প্রদর্শনী, কারাবন্দীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নাটক প্রদর্শন করা হয়।

বরিশাল

বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল থেকেই জনস্রোতে মুখর হয়ে ওঠে বরিশাল নগরের রাজপথ। সকাল সাতটায় বরিশাল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও বরিশাল নাটকের যৌথ আয়োজনে নগরের ব্রজমোহন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় প্রভাতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাড়ে আটটায় চারুকলা বরিশালের আয়োজনে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য ‘বৈশাখ উৎসব-আনন্দ শোভাযাত্রা-১৪৩২ ’।

চারুকলা বরিশাল এর আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে নারী শিশু সহ নানা শ্রেণির মানুষ। কালীবাড়ি রোড, বরিশাল নগর, ১৪ এপ্রিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ ছাড়া বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউস থেকে আরেকটি শোভাযাত্রা বের হয়। বরিশাল সিটি করপোরেশনও নিজস্ব শোভাযাত্রার আয়োজন করে। জেলা ও মহানগর বিএনপিও পৃথকভাবে শোভাযাত্রার আয়োজন করে। ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধ এবং নববর্ষ উদ্‌যাপনে বাধা ও নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আয়োজন করে ‘প্রতিবাদী মঙ্গল শোভাযাত্রা’।

সিলেট

সিলেটে দিনব্যাপী নাচ, গান, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে সংগঠনগুলো পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করছে। সকাল আটটায় নগরের কিনব্রিজ এলাকার সারদা হল প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতির উদ্যোগে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি সম্মেলক ও একক পরিবেশনায় অংশ নেন। সকাল আটটায় নগরের কেওয়াপাড়া এলাকার শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজে আনন্দলোক সিলেটের উদ্যোগে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়।

এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সিলেট সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সুবিদবাজার এলাকার ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। 

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সিলেট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের করা হয়। ছবিটি সকালে নগরের কোর্টপয়েন্ট থেকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সকাল ১০টায় শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বৈশাখী মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

এ ছাড়া সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, দুর্নীতিমুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করেছে।
 

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল সাড়ে আটটায় একটি শোভাযাত্রা নতুন বাজার এলাকার ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বের হয়। নতুন বাজার, টাউন হল মোড় হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয় এটি। পরে সেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে সার্কিট হাউস মাঠে ঘুড়ি উৎসব ও রশিটানা খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
নববর্ষ উপলক্ষে ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় মাটির জিনিসপত্র নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। আজ দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
 
নগরের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বর থেকে নববর্ষ উদ্‌যাপন পর্ষদের উদ্যোগে বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এ ছাড়া জয়নুল আবেদিন উদ্যানজুড়ে বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বসে গ্রামীণ মেলা। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে নতুন বাজারের হরিকিশোর রায় রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলার উপজেলাগুলোতে বর্ণিল আয়োজনে নববর্ষ উদ্‌যাপন করা হয়।
 

কুমিল্লা

কুমিল্লায় অন্যান্য বছর পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হলেও এবার বের করা হয়েছে ‘বৈশাখী শোভাযাত্রা’। নাম যা-ই হোক, নববর্ষকে স্বাগত জানাতে কোনো কিছুরই যেন কমতি ছিল না৷ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখা থেকে বর্ষবরণের বৈশাখী শোভাযাত্রা শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।
 
কুমিল্লায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
 
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, প্রতিবছর যেভাবে পয়লা বৈশাখ ও চৈত্রসংক্রান্তি উদ্‌যাপন করা হতো, এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে কুমিল্লা টাউন হলে এক দিনের বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এবার সেটি দুই দিনব্যাপী করা হয়েছে।

এ ছাড়া নববর্ষ ঘিরে কুমিল্লা নগরে দিনব্যাপী নানা আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাপখেলা, মোরগ লড়াই, বানর লড়াই, লাঠিখেলাসহ গ্রামীণ বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়। সোমবার সকাল সোয়া আটটায় জেলা শহরের ফারুকী পার্কে জেলা প্রশাসন নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে সাতটায় জেলার জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন মুক্তমঞ্চ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়।
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জেলার ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফারুকী পার্কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পাবনা

আনন্দ শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলাসহ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে পাবনায়। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সকাল আটটায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
পাবনার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ এডওয়ার্ড কলেজে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নৃত্য, গান, অভিনয় ও কবিতা আবৃত্তি করেন কলেজের সাহিত্য-সংস্কৃতি কেন্দ্রের সদস্যরা। সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা, ১৪ এপ্রিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
 
এ ছাড়া বর্ষবরণ উপলক্ষে জাসাস পাবনা জেলা শাখা শহরের শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মেলা, লাঠিখেলা, ঘুড়ি উৎসব ও তারুণ্যের বৈশাখী শোভাযাত্রা করেছে। গণশিল্পী সংস্থা পাবনা জেলা শাখা শহরের শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অন্যদিকে সদরের সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি গ্রামে চরগড়গড়ি সাহিত্য নিকেতনের আয়োজনে তিন দিনের বৈশাখী মেলা ও সাহিত্য উৎসব শুরু হয়েছে।
 

পঞ্চগড়

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়াম চত্বরে পয়লা বৈশাখ ও বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন গ্রামীণ খেলার আয়োজন করে। একই সঙ্গে অডিটরিয়াম চত্বরে বসেছে বৈশাখী মেলা। গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া এসব খেলায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রবীণ ব্যক্তিই যেন ফিরে যান তাঁদের শৈশবে।

এর আগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ ছাড়া বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরে বৈশাখী শোভাযাত্রা করেছে জেলা বিএনপি।
 

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা সদর এলাকার জনসেবা চত্বরে লোকজ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক।

বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা বিএনপির উদ্যোগে বেলা ১১টায় শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল ১০টায় আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ ছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন করা হয়। মির্জাপুরে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
 

গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় সাঁওতাল ও বাঙালি সম্প্রদায়ের সম্মিলনে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে সাঁওতাল ও বাঙালিদের একটি শোভাযাত্রা শহরের ডাকবাংলো মোড় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
গাইবান্ধায় সাঁওতাল ও বাঙালিদের একটি শোভাযাত্রা শহরের ডাকবাংলো মোড় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
 
শোভাযাত্রা শেষে শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে আলোচনা সভা হয়। এতে বক্তব্য দেন আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ও সদস্যসচিব প্রবীর চক্রবর্তী, সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির, সাঁওতাল নেতা বার্নাবাস টুডু, ব্রিটিশ সরেন, তৃষ্ণা মুরমু প্রমুখ।
 

জয়পুরহাট

সকাল সাড়ে আটটার দিকে জয়পুরহাট শহরের রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে একটি বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এটি জেলা সার্কিট হাউস মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী লোকজ মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী। এরপর সার্কিট হাউস মাঠে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
 

ভোলা

ভোলা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। শোভাযাত্রায় প্রকাশ পায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি অফিসার্স ক্লাবের বটমূলের টেনিস গ্রাউন্ডে এসে শেষ হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমির ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
 

পিরোজপুর

পিরোজপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল আটটায় সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বৈশাখী মেলা মাঠে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, সামাজিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

পিরোজপুর জেলা বিএনপি আলাদা আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, তেজদাসকাঠী কলেজ, পিরোজপুর টাউন ক্লাব আলাদাভাবে বর্ষবরণ উদ্‌যাপন করে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ থেকে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে।