প্রতিনিধি রায়গঞ্জ
মেলায় শিশুদের খেলনা বিক্রির অনেক দোকান বসেছে। চিত্তবিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, জাদু প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাঁস গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমজমাট পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী বারুহাঁসের মেলা শুরু হয়েছে। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই মেলা স্থানীয়ভাবে ভাদাই মেলা নামে পরিচিত। শুক্রবার বিকেলে বারুহাঁস গ্রামে শুরু হওয়া মেলার শনিবার ছিল মূল পর্ব। আজ রোববার নারীদের জন্য বউ মেলার মধ্য দিয়ে এ বছরের মেলা শেষ হবে।
মেলা উপলক্ষে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মেলায় মাছ, মাংস, কাঠের আসবাবসহ গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। কৃষিকাজের জন্য দরকারি কাস্তে, কুড়াল, কোদালসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি হয়। চিত্তবিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, জাদু প্রদর্শনীসহ শিশুদের নানা ধরনের খেলনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বারুহাঁস গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভদ্রা নদীর স্থানীয় নাম ভাদাই। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বারুহাঁসের তৎকালীন জমিদার দেলোয়ার হোসেন খান চৌধুরীর আগ্রহে চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী ভাদাই মেলা শুরু হয়। সেই রীতি মেনে এখনো মেলা চলছে। আগের ঐতিহ্য মেনে আগের দিন বিকেলে মেলার বিভিন্ন স্টলে পণ্য বিক্রি শুরু হয়।
বারুহাঁস গ্রামের চৌধুরী বাড়ির তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি হানিফ খান চৌধুরী বলেন, একসময় সিরাজগঞ্জসহ পাবনা, বগুড়া ও নাটোরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মেলায় আসতেন। মানুষের পদচারণে চারদিকে গমগম করে উঠত। মেলা ঘিরে মাসখানেক আগে থেকেই বাড়িতে বাড়িতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ধুম পড়ে যেত। প্রতিটি বাড়ি আত্মীয়স্বজনের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠত। এখন সেই অবস্থা না থাকলেও মেলার ঐতিহ্য মেনে অনেক বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এসেছেন।
আজ সকালে ভাদাই মেলায় দেখা হয় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রভাত কুমার ভৌমিকের সঙ্গে। পাশের কুসুস্বী গ্রামের জামাতা তিনি। স্ত্রীর বড় ভাইকে সঙ্গে মেলায় এসেছেন। মেলা থেকে মাছ, মিষ্টিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে শ্বশুরবাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।
প্রভাত কুমার ভৌমিক বলেন, ৪০ বছর ধরে জামাতা হিসেবে তিনি মেলায় আসেন। আগে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আসতেন। এবার ব্যস্ততার কারণে একা এসেছেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে দেওয়া পরবি (মেলা উপলক্ষে দেওয়া নগদ টাকা) খরচ করেছেন। মেলা উপলক্ষে এলাকা জমজমাট হয়ে ওঠে তিনি জানালেন।
পাশের নাটোরের সিংড়া উপজেলার ঠেংগা পাখুড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই মেলার জন্য সারা বছর আমরা অপেক্ষা করে থাকি। মেলায় মাছসহ বিভিন্ন জিনিস সুলভ মূল্যে বিক্রি হয়।’ রায়গঞ্জের ঘুড়কা গ্রামের ব্যবসায়ী সেলিম রেজা ঝুড়ি নিয়ে এসেছেন মেলায়। তিনি বলেন, মেলার আগের রাতে সব ঝুড়ি বিক্রি হয়ে যায়। তিনি এবারে চার মণ ঝুড়ি নিয়ে এসেছেন।
মেলায় কেনাকাটা করছিলেন পাশের চৌবাড়িয়া গ্রামের বিষ্ণুপদ সরকার। তিনি বলেন, বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। তাঁদের জন্য মেলা থেকে দই-মিষ্টি ও মাছ নিয়ে যাচ্ছেন। বড় একটি মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছিলেন এক নারী। তিনি বলেন, মেলা উপলক্ষে বড় বড় মাছ পাওয়া যায়। তাই এবার নিজেই পছন্দের মাছ কিনে বাড়ি যাচ্ছেন।
কলেজশিক্ষক সনাতন দাস বলেন, আবহমান বাংলার অতিপ্রয়োজনীয় সাংসারিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত অনেক কিছু নিয়ে এ মেলার আয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেলা হচ্ছে।