প্রতিনিধি কুমিল্লা
কুমিল্লার মুরাদনগরে গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলী | ছবি: সংগৃহীত |
কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে জেলা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম ইদ্রিস আলী ওরফে হাজি ইদ্রিস। তিনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পরিবহনশ্রমিক নেতা। তিনি স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। থানায় হামলার মামলা ছাড়াও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগে হওয়া আরেকটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি ইদ্রিস আলী।
এদিকে বিএনপির নেতা ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তারের খবরে দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পরিবহনশ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপরও আজ রাত ৯টা পর্যন্ত মুরাদনগর থেকে কুমিল্লা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ মার্চ ইফতারের আগে কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান স্থানীয় শ্রমিক দলের নেতা আবুল কালাম। উবায়দুল সিদ্দিকী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার চাচাতো ভাই। ওই ঘটনার পর পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নেয়। এরপর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
পরদিন থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানাকে। এ ছাড়া উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের অভিযোগে আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। অভিযুক্ত আবুল কামাল উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদে রয়েছেন।
পুলিশের করা মামলার প্রধান আসামি মাসুদ রানা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। তবে এই দুটি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বিএনপির নেতা ইদ্রিস আলীকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আজ দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী নেতার মামলাকে হয়রানিমূলক বলে দাবি করে আসছেন। সর্বশেষ আবুল কামালের ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ কুমিল্লার আদালতে থানার ওসিসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা মামলা করেছেন। শ্রমিক দলের নেতা আবুল কামালও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, থানায় হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ আজ গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির নেতা ইদ্রিস। তিনি থানায় হামলা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া দুটি মামলার আসামি। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে এখন ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। আগামীকাল রোববার সকালে তাঁকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হবে। মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইদ্রিসকে গ্রেপ্তারের পর কোম্পানীগঞ্জ বাজারে কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।