প্রতিনিধি শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসবে ফুটে উঠেছে চা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা। শনিবার শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা-বাগানে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

চা–বাগানের শ্রমিক কলোনির সামনে ফুটবল মাঠের মাঝখানে নানা রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দর্শকসারি। মাঠের একপাশে উঁচু মঞ্চে উঠলেন অতিথিরা। তাঁদের বক্তব্যের পর মঞ্চ থেকে শুকনো রং ছিটিয়ে শুরু হয় ফাগুয়া উৎসব। এরপর একে একে মঞ্চে ওঠেন চা জনগোষ্ঠী শিল্পীরা। নানা গানে ও নৃত্যে তুলে ধরেন তাঁদের জীবনকাহিনি।

শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা–বাগানের মাঠে এমন দৃশ্য দেখা যায়। জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত উৎসবে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসলাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব ও ফাগুয়া উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রীতম দাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম, বালিশিরা চা–বাগানের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সালাউদ্দিন, চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল বাড়াইক, ফাগুয়া উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যসচিব অনিল তন্তুবায় প্রমুখ।

চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা গুরুবন্দনা (ভোজপুরি), কুমুর দ্বৈত (বাড়াইক), হালি গীত (ভোজপুরি), পত্র সওরা (উড়িষ্যা), ডাল ও কাঠি নৃত্য (তেলেও), চড়াইয়া নৃত্য (উড়িষ্যা), কমেডি (ভোজপুরি), হাঁড়ি নৃত্য (উড়িষ্যা), ঝুমুর (মাহাতো কুর্মী), বিরহা, হোলি গীত (ভোজপুরি), হোড়কা বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে, হোলি গীত (গড় সম্প্রদায়) ইত্যাদি পরিবেশন করে।

উৎসব দেখতে আসা ফাল্গুনী রায় বলেন, ‘এখানে এসে অনেক ভালো লাগল। চা জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখলাম। কত রঙিন এই উৎসব। এসে অনেক আনন্দ পেয়েছি।’ চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক বলেন, ‘ফাগুয়া আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। দুর্গাপূজার পর এটিই চা–বাগানের বড় উৎসব। আমরা চা–শ্রমিকেরা এই উৎসবে অনেক আনন্দ করি।’

পরিমল সিং বলেন, চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা ভাষাভাষী মানুষ আছে। আলাদা আলাদা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আছে। ধীরে ধীরে চা জনগোষ্ঠীর অনেক ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। সরকার এসব সংস্কৃতি ধরে রাখতে উদ্যোগী না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে। তাঁরা চা জনগোষ্ঠীর জন্য সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার দাবি জানান।

ফাগুয়া উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের প্রীতম দাশ বলেন, মৌলভীবাজারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা–বাগান আছে। এসব বাগানে সবচেয়ে বেশি চা জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাঁদের নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি আছে। চা–শ্রমিকদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে তাঁরা নানা সময়ে অনুষ্ঠান করে থাকেন। ফাগুয়া উৎসব বড় হওয়ায় বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন।