প্রতিনিধি ঈশ্বরদী
শর্ষে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষি | ফাইল ছবি |
পাবনার ঈশ্বরদীতে এ বছর লিচুর ফলন ভাল হয়নি। এর ফলে লিচুর মুকুলের অভাবে মৌচাষিরা বর্তমানে আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
মৌচাষীরা জানাচ্ছেন, মধু সংগ্রহের জন্য সাধারণত লিচু বাগানকে প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এবছর লিচুর মুকুল না থাকার কারণে মৌমাছির সংখ্যা কম, ফলে মধু সংগ্রহও সীমিত হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে বসন্তের শুরুতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌচাষিরা লিচুর মুকুলে মধু সংগ্রহ করতে ঈশ্বরদীর বাগানে আসেন। কিন্তু এবছর এই মুকুল না থাকায় তাদের কাজ মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লিচুর রাজ্য বলে খ্যাতি আছে ঈশ্বরদীর। জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে লিচুকে দিয়ে। এখানে চাষ হয় মোজাফফর বা দেশি লিচু, বোম্বাই, এবং চায়না-৩। এছাড়াও, কদমি, কাঁঠালি, বেদানা, চায়না-১, এবং চায়না-২ জাতের লিচু। উপজেলায় প্রায় সব জায়গাতে কম বেশি লিচুর চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় পাকশী ইউনিয়নের নতুন রূপপুর, ছিলিমপুর, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাদা, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর, ভাড়ইমারী গ্রামে। লিচু চাষের জন্য উপযোগী বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় এ অঞ্চলে লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহও বাড়ছে দিন দিন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হচ্ছে, যেখানে বাগানের সংখ্যা ১১ হাজার ৫টি। সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বোম্বাই লিচুর, যা ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এছাড়া চায়না থ্রি জাতের লিচু ৫০ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী জাতের লিচু ৫৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। বসতবাড়ির উঠানে লিচুগাছ তুলনামূলক কম থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে। উপজেলায় লিচু চাষি রয়েছেন ৯ হাজার ৬২০ জন।
আরও জানা গেছে, উপজেলায় ফলন্ত লিচু বাগানের পরিমাণ ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এখানকার লিচু বাজারে বিক্রি হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার।
গত দুই দিন কয়েকটি লিচুবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে তামাটে রঙের নতুন পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে নাকফুলের মতো মুকুল। মুকুলের হাটে মৌমাছির গান মিলিয়ে যাচ্ছে ফাল্গুনের বাতাসে। গাছের গোড়াকে আগাছামুক্ত করেছেন কৃষক। প্রথম পর্বের পরিচর্যাসহ একবার কীটনাশক ছিটানো (স্প্রে) হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম নামে এক মৌচাষি জানান, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মৌচাষিরা এই মৌসুমে লিচু মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসতেন। তবে এ বছর মুকুলের অভাবে মৌচাষ প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং মৌমাছির খাদ্য সংকটও তৈরি হয়েছে।
এদিকে, কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, লিচু ফুলের পরাগায়ন এবং রোগবালাই কমানোর জন্য মৌমাছি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর লিচু বাগানে সাড়ে ৬ হাজার মৌবাক্স স্থাপন করা হয় এবং মৌচাষিরা গড়ে প্রতি বাক্স থেকে ৪ কেজি মধু সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। তবে এ বছর মুকুল না থাকায় আশা করা হচ্ছে না যে, তারা গতবারের মতো ভালো পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন।