নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামী | ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল’ মর্মে বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের মুজিবুল আলম প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ১২ মার্চ বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার দীর্ঘ এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল’ মর্মে যে মন্তব্য করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি তাঁর এ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যে বিস্মিত। জনাব মাহফুজ আলমের বক্তব্যের জবাবে আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, তিনি জামায়াত সম্পর্কে ভিত্তিহীন ও অসত্য বক্তব্য দিয়ে একটি প্রতিবেশি দেশের গুপ্তচর কারাবন্দী শাহরিয়ার কবিরদের ভাষাতেই কথা বলেছেন। 

পরওয়ার আরও বলেন, ‘মাহফুজ আলম একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা। তাই কোনো রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে সমালোচনা ও অসত্য বক্তব্য দেওয়ার তার কোনো নৈতিক ও বিধিগত অধিকার তিনি রাখেন না। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে হলে রাজনীতির ময়দানে এসে বক্তব্য দেওয়া সমীচীন। তাঁর এ বক্তব্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অরাজনৈতিক চরিত্রকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ 

তিনি বলেন, শেখ মুজিবের আমলে যুদ্ধাপরাধের জন্য যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল তাতে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জামায়াতের কারো সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে শেখ মুজিব নিজেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিয়েছিল এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানী সৈন্যদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করে গিয়েছেন। জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েই তিনি তাঁর নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ বানিয়ে বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে যে বিচার করা হয়েছে তা ছিল বিচারের নামে একটি প্রহসন। তাঁর প্রমাণ স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্য, মাওলানা সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর বক্তব্য। এমনকি বৃটিশ সুপ্রিম কোর্টে হাসিনা সরকারের ওই বিচার গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনাব মাহফুজ আলমের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ অসত্য, ভিত্তিহীন ও অনুমান নির্ভর। তবে তাঁর এ বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক অসৎ অভিপ্রায় থেকে বা কোনো অপশক্তির ইন্ধনে তাঁদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপরিণামদর্শী আকাঙ্খা থেকেও হতে পারে বলে দেশবাসী মনে করে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী আহলে সুন্নত আল জামায়াতের পূর্ণ অনুসারী। জামায়াতের আক্বিদা ও আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ অবান্তর। জামায়াত, ফরায়েজী জামায়াত, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী দল বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে আসছে। ১৯৮৩ সালে ইত্তেহাদুল উম্মাহ গঠনের মাধ্যমে এ দেশের হক্কানী পীর ও আলেমগণ জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন।

পরওয়ার আশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বক্তব্যের পর তার (মাহফুজ আলম) মনের বিভ্রান্তি দূর করবেন এবং ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন। ভবিষ্যতে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে তিনি বিরত থাকবেন।