রিয়াদ ইসলাম

প্রদীপ প্রজ্বালন | ফাইল ছবি

মাগুরায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর চিকিৎসাধীন সেই শিশু আছিয়া আর নেই। আমরা যারা এক সপ্তাহ ধরে প্রার্থনা করেছি, প্রতিবাদ করেছি, বিচার চেয়েছি—তারা আজ শূন্য হাতে ফিরে এসেছি। কিন্তু শুধু আমরা না, পুরো বাংলাদেশ আজ এক অদৃশ্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের ব্যর্থতা আছিয়ার নিথর শরীরে লেখা রয়ে গেছে।

আমাদের দেশ এগোচ্ছে—উন্নয়নের স্রোতে, গগনচুম্বী অট্টালিকায়, অর্থনীতির পরিসংখ্যানে। কিন্তু উন্নয়ন কি আদৌ আছিয়ার দুঃসহ আর্তনাদ শুনতে পায়? এই সমাজ কি একবারের জন্য নিজেকে প্রশ্ন করেছে, কেন বারবার শিশুরা এমন পাশবিকতার শিকার হচ্ছে?

এটা শুধু আছিয়ার গল্প নয়, এটা পুরো বাংলাদেশের গল্প। প্রতিদিন কোনো না কোনো শহরে, কোনো না কোনো গ্রামে একেকটা আছিয়া আমাদের চোখের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু খবরে দেখি, ফেসবুকে পোস্ট দিই, রাস্তায় মিছিল করি—তারপর? কয়েকদিন পর সব ভুলে যাই। অপরাধীর বিচারের দাবি তোলার পাশাপাশি কি আমরা নিজেদের বিচার করতে রাজি আছি?

আমাদের চারপাশটা আজ যেন এক অন্ধকার গহ্বরে পরিণত হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক অবক্ষয়, ক্ষমতার দম্ভ আর নৈতিকতার সংকট একেকটা আছিয়ার জন্ম দিচ্ছে। আমরা মুখে বলি, "শিশুরা ফুলের মতো পবিত্র," অথচ সেই ফুলের পাপড়িগুলো আমরা নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলি।

আমাদের চোখের সামনে ধর্ষণের শিকার হয় মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত, নিখোঁজ হয় একের পর এক শিশু, পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিক্ষার্থী আবরারকে। আর আমরা? আমরা একেকবার মোমবাতি জ্বালাই, প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়াই, তারপর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাই। আমাদের প্রতিবাদ, আমাদের ক্রোধ—সবই ক্ষণস্থায়ী।

আছিয়া চলে গেছে, কিন্তু সে আমাদের একটা আয়না দেখিয়ে গেছে—একটা ভাঙা, রক্তমাখা আয়না। যেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে আমাদের সমাজের পশুত্ব, আমাদের বিবেকহীনতা। আমরা কি সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে বদলানোর শক্তি রাখি? নাকি আরও একদিন পর আরেকটা শিশুর মৃত্যু দেখে আবার কিছুদিন শোক পালন করব?

উত্তর আমাদেরই দিতে হবে। যদি সত্যিই আমরা আরেকটি আছিয়ার মৃত্যু দেখতে না চাই, তবে আমাদের সমাজকে, বিচারব্যবস্থাকে, শিক্ষাকে—সবকিছুকে বদলাতে হবে। কারণ, প্রতিটি শিশু বাঁচার অধিকার নিয়ে জন্মায়, মৃত্যুর জন্য নয়।

● লেখক: সাংবাদিক