প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
সংঘর্ষ | প্রতীকী ছবি |
রাজশাহীর তানোরে বিএনপির ইফতারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর আবার ইফতার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তানোরের রাতৈল বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাজারের একটি মুদিদোকানে ব্যাপক লুটপাটের পর ভাঙচুর করা হয়েছে। দোকানমালিকের অভিযোগ, ইফতার মাহফিলে চাঁদা না দেওয়ার কারণে তাঁর দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। ইফতারে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ঠিকাদার মো. রনিও। তবে ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি আজাদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলী এই ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।
সন্ধ্যার পর মফিজ উদ্দিনের সমর্থক ও আজাদ আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আজাদ আলীর পক্ষের মো. রনি, তাঁর ভাই মো. সজীব, গোলাম রাব্বানী, মো. শামীম, মো. জনি, রুহুল আমিন, নুরুল ইসলাম, মুদিদোকানি দুরুল হুদা ও তাঁর ছেলে মো. মিনু আহত হন। এ ছাড়া মফিজ উদ্দিনের পক্ষের জিয়াবুর রহমান, আজিজুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, সাহাবুর ইসলাম, মো. সুমন ও নেকশাদ আলী আহত হন। আহতদের সবাইকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউনিয়ন বিএনপির আহত প্রচার সম্পাদক মো. রনি বলেন, ‘এ বছরই ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানে একজন নিহত হন। তাই আমরা ইফতার আয়োজনের পক্ষে না। ইউনিয়ন বিএনপি এটা বয়কট করেছে। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন ইফতার করবেনই। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা তুলেছেন। এসবের আমরা অডিও রেকর্ডও পেয়েছি।’
রনি আরও বলেন, ‘ইফতারের জন্য মুদিদোকানি দুরুলের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ার কারণে ইফতারের পর মফিজের লোকজন দুরুলের দোকানে হামলা করেন। লুটপাট শুরু করলে আমরা গিয়ে বাধা দিই। তখন আমাদেরকেও মারে। এতে আমরা ৯ জন আহত হই। আমাদের মেরে দোকান থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এসব গল্প কারা বানিয়ে বলে? এ রকম কোনো ঘটনা না। বিএমডিএর (বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ডিপ (সেচপাম্প) নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ঘটনা। আমি ওই এলাকায় দুই বছর ধরে যাইনি। আমার কোনো লোকও মারামারিতে যায়নি।’ তবে আজাদ আলীর পক্ষের লোকজনের হামলায় নিজের পক্ষের ছয়জন আহত হয়েছেন বলে জানান মফিজ উদ্দিন। তিনি তাঁদের নামও জানান।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, ‘মারামারিতে দুই পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে। তবে কী নিয়ে ঘটনা, তা জানি না। কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ এলে ঘটনা সম্পর্কে বলা যাবে। অভিযোগ হলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
এর আগে ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইফতারে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। আর প্রধান বক্তা ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান। সেদিন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোমিনুল হকের অনুসারীরা প্রধান অতিথিকে বরণ করতে চাইলে বাধা দেন বর্তমান সভাপতি মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা।
তখন দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মোমিনুল হকের ছোট ভাই গানিউল ইসলাম আহত হন। পরে তিনি মারা গেলে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।