রিয়াদ ইসলাম
![]() |
নয়নতারা হাতে মেয়ে | ছবি: এআই দিয়ে তৈরি |
রাত গভীর হয়েছে। নিস্তব্ধ শহরের আনাচে-কানাচে কেবল হাওয়ার সঙ্গীত বয়ে যাচ্ছে। পথের ধারে ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো নিভু নিভু করে জ্বলছে— ঠিক যেন ক্লান্ত কোনো পথিকের দৃষ্টির মতো। অন্ধকারের রাজত্বে এসব আলোর বিন্দুগুলো একাকীত্বের মতোই ভেসে বেড়াচ্ছে।
শহরের সরু রাস্তায় ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এক মেয়ে। সাদা শাড়ির আঁচল বাতাসে দুলছে, হাতে কিছু নয়নতারা ফুল— তার প্রিয়জনের জন্য ভালোবাসার নিদর্শন। লাল চুড়ির মৃদু ঝনঝনানিতে রাতের নিস্তব্ধতা খানিকটা চঞ্চল হয়ে ওঠে। প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে তার হৃদয়ের ধুকপুকানিও যেন বাড়ছে।
পাশেই বিস্তীর্ণ পদ্মপুকুর, যার জলে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে কেমন জানি এক অলৌকিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। পদ্মফুলগুলো যেন চুপচাপ বসে কোনো অপেক্ষার গল্প শোনাচ্ছে। দূরে কোথাও ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে, তবে সেটাও যেন আজ বিষাদে ভরা।
মেয়েটি এগিয়ে যায়, কারণ সে জানে— আজ তার প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হবে। হয়তো কিছু কথা হবে, হয়তো কোনো স্বপ্ন বোনা হবে। কিন্তু হঠাৎ তার পা থমকে যায়। বুকের ভেতর কেমন যেন কাঁপুনি ওঠে।
পুকুরের ঠিক পাশেই, যেখানে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে তারা একসঙ্গে সন্ধ্যার শেষ আলোকে সাক্ষী থাকত, সেখানে আজ পড়ে আছে এক নিথর দেহ। রক্তে ভিজে আছে চারপাশের ঘাস, কাদা মাটির উপর লাল রক্তের দাগ যেন ফুটে থাকা পলাশের মতো জ্বলজ্বল করছে।
মেয়েটির চোখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে, তার হাতে ধরা নয়নতারা ফুলগুলো একে একে মাটিতে ঝরে পড়ে। শাড়ির আঁচল বাতাসে একবার উড়ে গিয়ে আবার স্থির হয়ে যায়। পায়ের নিচে শুকনো পাতার মচমচ শব্দ আজ যেন বজ্রধ্বনির মতো লাগছে।
সে বোঝে, এই নিস্তব্ধতা কোনো সাধারণ নীরবতা নয়— এটি এক অনন্ত শূন্যতা। ঝিঝি পোকার ডাক থেমে গেছে, হাওয়া স্তব্ধ। শুধু পদ্মপুকুরের জলে প্রতিফলিত চাঁদের আলো যেন এক বোবা কান্নার মতো কাঁপছে।
নয়নতারা ফুলগুলো পড়ে থাকে রক্তের পাশে— ভালোবাসার শেষ অর্ঘ্য হয়ে।