প্রতিনিধি জামালপুর

যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ইজিবাইকের এক যাত্রী নিহত হওয়ার পর বাসটি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এর প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে।  রোববার দুপুরে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফেরিঘাট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জামালপুর সদর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ইজিবাইকের এক যাত্রী নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ লোজজন বাস আগুন ধরিয়ে দেন। এর প্রতিবাদে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে ওই সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত জামালপুর শহরের ফেরিঘাট এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। শহরের প্রবেশপথে সড়কে আড়াআড়িভাবে বাস রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। অনেক যাত্রী যানবাহন থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। পবিত্র রমজানের প্রথম দিনেই সড়ক অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের লোকজন। এ সময় কয়েকজন পথচারী সড়ক অবরোধের প্রতিবাদ করলে পরিবহনশ্রমিকেরা ওই পথচারীদেরও হেনস্তা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজীব পরিবহনের বাসগুলো সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। শুনলাম, সকালে মানুষ মেরে ফেলছে। তখন বিক্ষুদ্ধ লোকজন বাসটিতে আগুন দেন। এটা অন্যভাবেও সমাধান করতে পারত শ্রমিকেরা। একটা বিষয় বারবার দেখছি, শ্রমিকদের সঙ্গে কিছু একটা হলেই তারা জনগণকে জিম্মি করে, সড়ক বন্ধ করে দেয়। দেখুন, রোজার মধ্যে মানুষের কী পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে! এটা একটা মগের মুল্লুক, কিছু হলেই সড়ক অবরোধ।’

ক্ষুব্ধ কয়েকজন যাত্রী বলেন, শহর থেকে কোথাও যানবাহনে যাওয়া যাচ্ছে না। আবার বাইরে থেকে শহরেও ঢোকা যাচ্ছে না। এভাবে তো কোনো আন্দোলন হতে পারে না। এ আন্দোলন তুলে নিতে বা সড়ক থেকে বাসগুলো সরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকেরা সড়ক ছাড়েন। এরপর যানবাহন চলাচল শুরু করে। এ কাজ শুরুতেও করা যেত। তাহলে তো আর এই দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতো না।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজীব পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস জামালপুর শহরের দিকে আসছিল। এ সময় বিপরীত দিকে যাওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। এ সময় ঘাতক বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুদ্ধ জনতা। এর প্রতিবাদে পরিবহনশ্রমিকেরা রাস্তায় আড়াআড়িভাবে বাস রেখে সড়ক বন্ধ করে দেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন লোকজন।

পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, বাসটি পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে। সড়কে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেটার জন্য আইন রয়েছে এবং তার সমাধানও রয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলে বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে বাসটি একদম পুড়ে গেছে। তখন পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা দ্রুত যায়নি। বাসটি যাঁরা পুড়িয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

জামালপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভ বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে একটি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে চালক ও শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছেন। শ্রমিকদের ভাষ্য, পরিকল্পিতভাবে বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। যাঁরা আগুন দিয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনার দাবি শ্রমিকদের। বাসে আগুন দেওয়া ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়ায় অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন শ্রমিকেরা।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। ওই সময় কিছু লোক বাসটিতে আগুন দেন। এর প্রতিবাদে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছিলেন। যাঁরা আগুন দিয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে—এ আশ্বাসের পর শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।