প্রতিনিধি ঈশ্বরদী

গোলাগুলি | ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

পাবনার ঈশ্বরদীতে দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টা থেকে শুরু হয়ে রাত আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের চরকুড়লিয়া গ্রামের নছিরের ঘাট ও আকাতের ঘাটের দেড় কিলোমিটার সীমানার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রাতের রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার  সকাল থেকে আবারও দুই পক্ষের মহড়া শুরু হয়। এ সময় প্রতিপক্ষরা বেশ কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়। রাস্তায় হামলার শিকার হয়ে চরকুড়লিয়া গ্রামের মৃত আমিন মণ্ডলের ছেলে সাহাবুল ইসলামসহ (৩৮) দুজন আহত হন। তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় দুই পক্ষের মহড়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে নতুনভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়ে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরকুড়লিয়া এলাকার জোতদার কৃষক সাইদুর রহমান ও কুষ্টিয়ার হরিপুর ইউনিয়নের মুকুল গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এই দুই গ্রুপের মধ্যেই স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা রয়েছেন। ৫ আগস্টের পর লক্ষ্মীকুণ্ডা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কিছু নেতা-কর্মী বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে চর এলাকায় প্রভাব বিস্তারে শক্তি প্রদর্শন করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দিন আগে জেলার অন্যতম বৃহৎ লক্ষ্মীকোলা তালবাড়িয়া সরকারি খাসজমি প্রকাশ্যে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার পর থেকে এলাকায় ওই খাসজমি বণ্টন এবং আধিপত্য নিয়ে সাইদুর ও মুকুলের সঙ্গে দৃশ্যমান দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই জের ধরে গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ঈশ্বরদী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীকোলা ‘নছিরের ঘাট’ ও ‘আকাতের ঘাট’ এলাকায় সাইদুর গ্রুপ ও মুকুল গ্রুপের সমর্থকেরা মহড়া দিতে শুরু করে। রাত ১২টার দিক থেকে শুরু হয় গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ শোনা যায়। এভাবে রাত আড়াইটা পর্যন্ত দুই পক্ষের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান এলাকার অনেকেই। এতে চরের গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী বলেন, ‘শব্দ এত প্রকট ছিল যে আমরা ভয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম। তবে শব্দ শুনে মনে হয়েছে এগুলো গুলি ও ককটেলের শব্দ।’ তিনি জানান, লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে গোলাগুলি, মারামারি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং দখলের মূল কারণ ডিগ্রিরচরের খাসজমি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের দখলে এসব সরকারি চরের খাসজমি নিয়ন্ত্রণ করা হতো। ওই জমি বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ থেকে প্রকাশ্য নিলামে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা প্রদানের পর থেকেই এলাকার একাধিক পক্ষের মধ্যে এটা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছে।

লক্ষ্মীকুণ্ডা বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল মিয়া জানান, খবর পেয়ে তিন গাড়ি পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে যায় ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তবে পুলিশ এ সময় কাউকে খুঁজে পায়নি। তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাদের জানান, এলাকার সাইদুর রহমান ও কুষ্টিয়ার মুকুল গ্রুপের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও আধিপত্য নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।’

এ সম্পর্কে বক্তব্য নিতে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে মুকুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মুকুলের প্রতিপক্ষ সাইদুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, রাতের ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং প্রতিপক্ষরা তাঁদের লোকজনকে চর এলাকায় যেতে দিচ্ছে না।

ঈশ্বরদী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে শুনেছি। এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জেনেছি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, ডিগ্রিরচরের এসব জমি বৃহস্পতিবার সরকারি দরপত্র দাখিলের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়েছে। গুলির ঘটনাটি ইজারার প্রাসঙ্গিক না। তবে গুলিবর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।