নিজস্ব প্রতিবেদক

বই নিয়ে পাঠকদের আড্ডা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

দেখতে দেখতে শেষ হতে চললো অমর একুশে বইমেলা। পবিত্র রমজান মাসের কারণে এবার বইমেলার সময় বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর সময় বাড়ানো না হলে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই সাঙ্গ হবে মেলার এবারের আসর। এবারের বইমেলায় বেচাবিক্রি কেমন হলো—এমন প্রশ্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, গত বছরের তুলনায় বিক্রি এবার প্রায় অর্ধেক। আবার কেউ কেউ বলছেন, নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু বই ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়েছে। আর ক্রেতারা বলছেন, এ বছর একদিকে যেমন বইয়ের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বই কেনায় বাজেট কমিয়েছেন পাঠকেরা।

বৃহস্পতিবার বইমেলার ২৭তম দিনে সন্ধ্যার দিকে পাঠক ও বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এবারের বইমেলায় বিক্রি-বাট্টা নিয়ে সন্তুষ্ট নন অধিকাংশ বিক্রেতাই। মেলার শেষ দিকে এসেও তেমন একটা বেচাবিক্রি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের। যদিও মেলার শেষ দিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ভালো বেচা-বিক্রির প্রত্যাশা করছেন তারা।

প্রথমা প্রকাশনীতে খণ্ডকালীন বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন ঢাকা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবারের বইমেলার বেচা-বিক্রিতে প্রকাশকরা হতাশ। আমাদের প্রকাশনী থেকে রাজনৈতিক বইগুলো বেশি প্রকাশিত হয়। কিন্তু এবার রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নানা কারণে পাঠক কমেছে, বিক্রিও কমেছে। বঙ্গবন্ধু-কেন্দ্রিক বইগুলোও আগে অনেক বিক্রি হতো, এবার সেটাও নেই। সব দিক মিলিয়ে বিক্রি অর্ধেকেরও কম। তবে শুক্রবার ছুটির দিনে ভালো বিক্রির আশা করছি আমরা।’

বই খুঁটিয়ে দেখছেন পাঠকরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

অন্যধারা প্রকাশনীর শাহাদাৎ ইসলাম বলেন, ‘বিক্রি তুলনামূলক অনেক কম। আমার ধারণা, প্রতিবছরই মেলায় কিছু না কিছু পাঠক কমে, এবার সেটি আরও বেশি।‘ তবে টার্গেটেড বইগুলো মোটামুটি বিক্রি হয়েছে বলেও জানান এই তরুণ।’

এছাড়াও ‘অন্যপ্রকাশ‘, ‘মাওলা ব্রাদার্স‘, ‘কথাপ্রকাশ’সহ আরও কয়েকটি প্রকাশনীর প্রতিনিধিদেরও একই কথা। তাদেরও বিক্রি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বিক্রেতাদের এমন ‘হতাশা’ প্রসঙ্গে কথা হয় রাহিনুল ইসলাম নামে এক পাঠকের সঙ্গে। বই বিক্রি কী আসলেই কমেছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে অনেকেই মেলায় বই কিনবেন বলে সারা বছর প্রস্তুতি নেন। এবার তো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। এত অস্থির একটা সময়, মানুষ এটাতে আলাদা করে দৃষ্টি দিতে পারছেন না বলেই আমার মনে হয়।’

বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী তানজিনা হোসাইন। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর বই কেনার জন্য আলাদাভাবে বাজেট করা হয়। এবার তো সামনে ঈদ, আবার সবকিছু এমন ঊর্ধ্বগতি, সব মিলিয়ে বই কেনার জন্য আলাদা বাজেট করা হয়নি। তারপরও যে দু-একজন পছন্দের লেখক আছে, তাদের কয়েকটা বই সংগ্রহ করেছি। আমার ধারণা সবারই একই অবস্থা।‘

মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একটি অভ্যুত্থানের জন্ম ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সৈয়দ নিজার। সভাপতিত্ব করেন কাজী মারুফ।

ভিড় থাকলেও বেচাবিক্রি কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

লেখক বলছি অনুষ্ঠান

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সায়ীদ আবুবকর, কবি মিতা আলী এবং কবি, সম্পাদক ও শিশুসাহিত্যিক জামসেদ ওয়াজেদ।

নতুন বই

আজ ২৭তম দিনে বই মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭৬টি। সব মিলিয়ে এবারের বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৪টি।

শুক্রবারের সময়সূচি ও অনুষ্ঠান

শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার সমাপনী দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।

সমাপনী অনুষ্ঠান

বিকাল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন অমর একুশে বইমেলার সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান।

অনুষ্ঠানে ‘কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪’, ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’, ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার‘, ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার‘ এবং ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।