নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় বুধবার সাক্ষাৎ করেন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যথাসময়ে শেষ করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরশেন-রোসাটম এর মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভের বৈঠকে তিনি এ ব্যাপারে রাশিয়ার সহযোগিতা চান।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেছে।

রাশিয়ার ঋণে পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৭ সালে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হলেও কোভিড মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ থমকে যায়।

যে কারণে চলতি বছর জানুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়া কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। ১২০০ মেগাওয়াট করে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রথম ইউনিটের জ্বালানি এসেছে ২০২৩ সালের অক্টোবরে।

বৈঠকে রোসাটমের মহাপরিচালক লিখাচেভ বলেছেন, শিগগির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে।

পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান পারমাণবিক সহযোগিতা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রোসাটমের সহযোগিতার প্রশংসা করেন তিনি।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “রাশিয়ার সহায়তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটার জন্য আমরা উন্মুখ হয়ে আছি।”

রোসাটমের মহাপরিচালক লিখাচেভ প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বলেন, প্রকল্পের নির্মাণকাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে এবং ইতোমধ্যে বহু মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। শিগগির পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে কেন্দ্রটি।

লিখাচেভ বলেন, রোসাটম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নিরাপত্তা ও গুণগত মান বজায় রেখে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বৈঠকে আন্তঃসরকার ঋণচুক্তি (আইজিসিএ) সংশোধন করে ঋণ ব্যবহারের মেয়াদ ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে শিগগির চুক্তির প্রোটোকল নম্বর ২ স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়।

পাশাপাশি, প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য জনবল প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা প্রটোকল এবং জ্ঞান স্থানান্তরের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।

রাশিয়ার প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশে রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার খোজিন, ফেডারেল এনভায়রনমেন্টাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সুপারভিশন সার্ভিসের ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সি ফেরোপোন্তভ, রোসাটমের প্রথম ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আন্দ্রেই পেত্রোভ ও এএসই জেএসসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আলেক্সি ডেরি।

রোসাটমের মহাপরিচালক লিখাচেভ বাংলাদেশে একদিনের সফরে রয়েছেন।

এর আগে তিনি এপ্রিল ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।