প্রতিনিধি শেরপুর

শেরপুরের নকলা উপজেলার ইসলামনগর সায়লামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাবিদার দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্ব নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীরা মাঠে বিক্ষোভ করে। মঙ্গলবার বিকেলে বিদ্যালয় মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

শেরপুরের নকলায় একটি উচ্চবিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাবিদার দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্ব নিরসন ও আরও কিছু দাবিতে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে শিক্ষকদের রেখে তালা দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের মুক্ত করেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার ইসলামনগর সায়লামপুর উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা প্রশাসন, বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল থেকে সায়লামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদ্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগারবিজ্ঞান) সেলিম আহমেদ ওরফে রুবেলকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে গত বছরের ১৫ আগস্ট নিয়োগ দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সালমা আক্তার ও সেলিম আহমেদ আত্মীয়। কিন্তু এই নিয়োগের পর থেকে তাঁদের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। এমনকি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমাও রয়েছে। এসব কারণে প্রায় ছয় মাস ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের সংখ্যা ১৮। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮০০।

চলমান অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে দুই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্ব নিরসনের দাবিতে এবং বিদ্যালয়ে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার দাবিতে শতাধিক শিক্ষার্থী মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় বিদ্যালয়ে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাবিদার সালমা আক্তারসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক আটকা পড়েন। শিক্ষকদের আটকে রেখে বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আরেক দাবিদার সেলিম আহমেদ বিদ্যালয়ে ছিলেন না।

সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নকলার ইউএনও ও বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক দীপজন মিত্র, থানার ওসি হাবিবুর রহমানসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে যান। এ সময় তাঁরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। ইউএনও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে জটিলতা ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে শিক্ষার্থীরা অফিস কক্ষের তালা খুলে দিলে শিক্ষকেরা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নকলার ইউএনও দীপজন মিত্র মঙ্গলবার রাতে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইসলামনগর সায়লামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে, সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাবিদার সালমা আক্তার জানান, প্রায় তিন বছর ধরে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু গত বছরের ১৫ আগস্ট সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি অন্যায়ভাবে তাঁকে (সালমা) পরিবর্তন করে সেলিম আহমেদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত (রেজল্যুশন) নেয়। এ সিদ্ধান্ত পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্থগিত করে। বর্তমানে নিজেকেই প্রকৃত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দাবি করেন সালমা।

সেলিম আহমেদ বলেন, সালমা আক্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন অন্যায় ও আইনবহির্ভূত কাজ করেছেন। যে কারণে সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে (সালমা) বরখাস্ত করেছিল। সালমা আক্তারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার কোনো বৈধতা নেই বলে সেলিম দাবি করেন।