প্রতিনিধি রংপুর

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় সহস্র হাতে মশাল প্রজ্বালন করা হয়। লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতু এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মশাল হাতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাইলেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনকারীরা। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন চরে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।

পরে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করেন এ অঞ্চলের শিল্পীরা। ভাওয়াইয়া গানেও তিস্তাপারের মানুষের দুঃখ ও দুর্দশার কথা উঠে আসে। এরপর রাত আটটার দিকে তিস্তাপারের জীবন–জীবিকা নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এ সময় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, ‘তিস্তাকে বাঁচাতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। স্লোগান একটাই, জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই। জাগো বাহে, দেশ বাঁচাই। বিএনপির দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।’

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ডাকে সহস্র হাতে মশাল প্রজ্বালন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতু এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাত ৯টার দিকে নকশিকাঁথা ব্যান্ডের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। বিএনপি নেত্রী ও সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীনও সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর তিস্তাপারের মানুষের জীবনসংগ্রামের গল্প নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র সাঁতাও দেখানো হয়।

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে গতকাল সোমবার লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি স্থানে সম্মিলিত অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নদীপারের হাজার হাজার বাসিন্দা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা সোমবার থেকে লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন বালুচরে প্যান্ডেল ও তাঁবু করে অবস্থান করছেন। আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টায় এই অবস্থান কর্মসূচি শেষ হবে।

এর আগে বেলা দেড়টার দিকে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তিস্তা নদীতে নেমে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা।

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি আগমীকাল সকালে শেষ হচ্ছে য় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আন্দোলনকারীরা বলেন, ভারত বছরের পর বছর তিস্তা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেছে, যার মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশের পাঁচ জেলার অন্তত দুই কোটি মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ ফসল ফলাতে পারে না। আবার বন্যার সময় হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দেওয়ায় এসব এলাকা ব্যাপক ভাঙনের শিকার হয়। প্রায় এক ঘণ্টা আন্দোলনকারীরা পানিতে অবস্থান করেন।

এ ছাড়া একই দাবিতে আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের তিস্তা সড়কসেতু থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর নেতৃত্বে পদযাত্রায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। তিস্তা সেতু থেকে পথযাত্রাটি রংপুরের কাউনিয়ায় আসে। তখন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসার নেতৃত্বে বিএনপির রংপুরের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শিশু, কিশোর, নারী ও পুরুষেরা অংশ নেন। 

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল প্রজ্বলনে তিস্তা পাড়ের মানুষ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন