প্রতিনিধি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে পদত্যাগকারী ও পদবঞ্চিত নেতারা। একই সঙ্গে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকে আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত হাসান সাকিবকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটির উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নূর নবী।

কমিটি গঠন করার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী এই কমিটিকে বিতর্কিত বলে আখ্যা দেন। পরে গত শুক্রবার রাতে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফেরদৌস শেখ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন মিয়া ও সংগঠক রাকিব হোসাইন। নতুন কমিটির দাবি তুলে রোববার থেকে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন পদত্যাগী ও পদবঞ্চিত নেতারা।

নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়ে মো. ফেরদৌস শেখ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘বিপ্লবীরা কখনো মাথা নত করে না। আর মাথা নত করার জন্য আন্দোলন করেনি। ফ্যাসিজমের পতন হয়েছিল এই বিপ্লবীদের মাধ্যমেই। যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল, তাদের ব্যতীত এসব পকেট কমিটি কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পকেট কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিপ্লবীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিস্ট যাবে কেন্দ্রে, কেন্দ্র থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়।’

এ আগে বৃহস্পতিবার ফেসবুকে পোস্ট করেন শাহিন মিয়া। তিনি লেখেন, ‘জবিতে (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি মূলত পদত্যাগ করা সমন্বয়ক নূর নবীর পছন্দের লোকদের নিয়ে করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়নি। এখানে দেখা হয়েছে নূর নবীর অনুগত কি না। এই ব্যক্তিগত কমিটি মানি না এবং প্রত্যাখ্যান করছি।’

এ বিষয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নুরনবী বলেন, ‘যারা কমিটির জন্য নাম জমা দিয়েছিল, সবাইকে আমরা রাখার চেষ্টা করেছি। এখন কেউ যদি বলে আমাকে রাখা হয়নি কেনো, আমার উত্তর হলো সে তার নাম পাঠায়নি। যারা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছে তাদের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা সম্ভব নয়। যারা কাজ করবে, সময় দেবে তার উপর ভিত্তি করে আমরা কমিটি করেছি।’

পদবঞ্চিত আরেক শিক্ষার্থী মাকসুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখি, বৈষম্যবিরোধী কমিটিতে থেকে তাদের পরে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে। তা না হলে আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে। এই আমাদের পরিশ্রম বৃথা যেতে পারে না। আমরা এই কমিটি মানি না।’

এ বিষয়ে রাকিব হোসাইন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যদি রাজনৈতিক দল হওয়ার আগে রাজনৈতিক পরিচয় হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমার কাছে এটি এখনো নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম, যে ব্যানারটা ছিল স্বৈরাচার পতনের শেষ হাতিয়ার, যে ব্যানারটার পেছনে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ। তাই এই প্ল্যাটফর্মের দায়িত্বকে আমি গৌরবের বলেই মনে করি। এখানে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার সব শিক্ষার্থীর রয়েছে। তাই এটিকে এখনই রাজনৈতিক পদ কিংবা পরিচয় বলে ভাবার কোনো সুযোগ দেখছি না। আর যদি তা–ই হয়, নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’

সদ্য ঘোষিত কমিটিতে পদবঞ্চিত শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে অনেক সহযোদ্ধা ছিল। হল থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীরা আসত। তাদের রাখা হয়নি। আন্দোলনের সম্মুখসারিতে যারা ছিল, তাদেরকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধীর কমিটি একজন ব্যক্তির পছন্দের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে।’