রয়টার্স ওয়াশিংটন

হোয়াইট হাউসে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি | ছবি: রয়টার্স

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এএফপির খবর বলছে, ভারতে যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প। আর মোদি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই হবে বলে জানিয়েছেন।

সাক্ষাতের পর মোদির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘এ বছরের শুরুতে ভারতে আমরা লাখ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়াচ্ছি। আমরা ভারতে এফ৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির দিকে এগোচ্ছি।’

ভারত প্রভাবশালী একটি ক্লাবে যুক্ত হবে। এতে ন্যাটোর মিত্রদেশ ইসরায়েল ও জাপানও থাকবে। এই ক্লাবভুক্ত দেশগুলো এফ৩৫ বিমান কেনার অনুমতি পাবে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই হবে।

এ সময় মোদি তেল ও গ্যাসের ওপর গুরুত্ব দেন। শুল্কে ছাড়, নতুন ব্যবসায়িক চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা বাণিজ্যযুদ্ধ রুখে দিতে পারে বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন মোদি।

হোয়াইট হাউসে মোদিকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। সাক্ষাতের কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি দেশের আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে সে সময় ট্রাম্প ভারতকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘খুব বড় অপব্যবহারকারী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আর ওই সময় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্কের প্রভাব পড়েছিল ভারতে।

ওভাল অফিসে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ভারত) আমাদের কাছ থেকে প্রচুর তেল ও গ্যাস কিনতে যাচ্ছে। আমরা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে মোদির প্রতিনিধিদল ট্রাম্পকে সম্ভাব্য কী প্রতিশ্রুতি দেবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিল। এর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), যুদ্ধযান ও জেট ইঞ্জিন ক্রয় বাড়ানোর বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে বসে মোদি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে যে ব্যাপারটি শিখেছি এবং গভীরভাবে যেটির প্রশংসা করি, তা হলো, তিনি জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে রাখেন। আর তাঁর মতো আমিও ভারতের জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে রাখি।’

এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে মার্কিন কৃষিপণ্য রপ্তানি, পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগের জন্য চুক্তি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, রাসায়নিকসহ বিভিন্ন খাতে শুল্ক কমানো হতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলেছে, এ সবকিছুই ট্রাম্পের জন্য মোদির উপহার হবে।

মার্কিন ও ভারতীয় কর্মকর্তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা এ বছরই একটি চুক্তি হবে বলে আশা করছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘খুব শিগগির বড় বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছি।’ ট্রাম্পের সহকারী বলেছেন, ভারতে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্যঘাটতি কমাতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ভারতের কাছ থেকে আরও সাহায্য চেয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের অনেক অভিবাসী রয়েছেন। ভারতীয়দের বড় একটি অংশ প্রযুক্তিশিল্প খাতে কাজের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। অনেকে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেন।