নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ শাহবাগ থেকে নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষকদের জলকামান ব্যবহার করে সরিয়ে দেয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করা চাকরিপ্রত্যাশীদের আজ বৃহস্পতিবারও ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন কয়েকজন। একজন নারী আন্দোলনকারী বলেছেন, ‘পুলিশ বলেছে, “স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান?”’
আজ বেলা একটার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া কয়েক শ চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় চারদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাঁদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করে; কিন্তু তাঁরা কথা শোনেননি। একপর্যায়ে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছিটিয়ে ও ধাওয়া দিয়ে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
আজ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দুই সন্তানকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন আন্দোলনকারী রাশেদা বেগম। সন্তানদের একজনের বয়স আট মাস, আরেকজনের ছয় বছর। রাশেদা বেগম বলেন, ‘আমি আমার দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমি কোনো অন্যায় করিনি।’
নারী এই আন্দোলনকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘লাঠিচার্জের সময় মহিলা পুলিশগুলো বলেছে, “একে ধর, একে ধর”। এক পুলিশ এসে আমাকে লাথি দেয়। পুলিশ আমার আপত্তিকর জায়গায় হাতও দিয়েছে। আরও অনেক নারীর সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে।’
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা আন্দোলনকারী সামিরা বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পাঁচজন নারী শিক্ষক আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজনকে আটক করে রাখা হয়েছে, যার একটি ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক নারী শিক্ষককে পুলিশ লাথি মেরেছে। লাথি দিয়ে পুলিশ তাদের বলেছে, “স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান?”’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ মনসুর বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। শারীরিক হয়রানির বিষয়ে ওসি বলেন, ‘সেখানে আমাদের মহিলা পুলিশ ছিল। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে এর আগেও তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। সে সময় পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গতকাল বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে আন্দোলন চলাকালে তাঁরা ঘোষণা দেন, আজ সকাল ৯টা থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ‘জাস্টিস ফর টিচার’, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ শুরু হবে।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিবের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীরা বৈঠক করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
তিন ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন। নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন রিট করলে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাঁদের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন।