জাহিদ হোসাইন খান

জিমন্যাস্টিকস শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি আনন্দদায়ক এক খেলা। মডেল: নায়রা রহমান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নায়রা রহমান। ছোটবেলা থেকেই নায়রা চঞ্চল, দৌড়াদৌড়ি ভালোবাসত। রমনা পার্কে কিংবা স্কুলের মাঠে সুযোগ পেলেই ছোটাছুটি করত। ইউটিউব দেখে নানা ধরনের শারীরিক কসরত আয়ত্ত করে জিমন্যাস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখে নায়রা। সেই আগ্রহেই তাকে জিমন্যাস্টিকসের স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবা-মা। নায়রার মা ইয়াসমিন হক বলেন, জিমন্যাস্টিকস চর্চায় সন্তানকে উৎসাহিত করছি ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে। জিমন্যাস্টিকস শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি আনন্দদায়ক এক খেলা। নায়রারও আগ্রহ আছে। স্কুলে শেখার পাশাপাশি নিজেও নানা কসরত শিখছে।’

যেসব বাবা-মা সন্তানের প্রযুক্তির আসক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন, তাঁরা আগ্রহ থাকলে সন্তানকে জিমন্যাস্টে ভর্তি করে দিতে পারেন। বিদেশে ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। আমাদের দেশে অত বিস্তৃত আকারে না থাকলেও সুযোগ আছে। সরকারি পর্যায়েও জিমন্যাস্টিকসের প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়।

কেন জিমন্যাস্টিকস গুরুত্বপূর্ণ

জিমন্যাস্টিকস শিশুদের নিয়ম মেনে চলা এবং রুটিন অনুশীলনের অভ্যাস গড়ে ওঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে জিমন্যাস্টিকস। এটি শুধু শারীরিক দক্ষতা বাড়ায় না, আত্মবিশ্বাস, মনোযোগ ও শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তুলতেও সহায়ক। জিমন্যাস্টিকস শিশুদের শক্তি, নমনীয়তা ও ভারসাম্য উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত অনুশীলনে শিশুর হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমন্যাস্টিকস প্রশিক্ষক নূরজাহান বেগম বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে জিমন্যাস্টিকসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জটিল কিছু কৌশল শিখতে পারার আনন্দ এবং চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার ক্ষমতা তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। এটি তাদের একাগ্রতা বাড়িয়ে তোলে ও চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করে।’

জিমন্যাস্টিকস শিশুদের নিয়ম মেনে চলা এবং রুটিন অনুশীলনের অভ্যাস গড়ে ওঠে। এই শৃঙ্খলা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য কাজেও প্রভাব ফেলে, যা তাদের একজন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। জিমন্যাস্টিকস দলগতভাবে চর্চা করার সময় শিশুদের মধ্যে অন্যদের সঙ্গে কাজ করা ও অপরকে সহযোগিতা করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। শিশুদের সামাজিক দক্ষতা বাড়ে।

২০১৯ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর বেশির ভাগ শারীরিকভাবে মোটেও সক্রিয় নয়। অর্থাৎ তারা যথেষ্ট পরিমাণে শরীরচর্চা বা খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে না। এই বয়সের প্রতি পাঁচজনের চারজনই যথেষ্ট শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করছে না। এসব কারণে শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্ক্রিন আসক্তি, স্থূলতা ও নিষ্ক্রিয়তার মতো সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে জিমন্যাস্টিকস একটি আকর্ষণীয় শারীরিক কার্যকলাপ হতে পারে। বাংলাদেশ আনসার দলের জিমন্যাস্টিকস কোচ নজরুল ইসলাম বলেন, শিশু-কিশোরদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য জিমন্যাস্টিকস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই বাবা-মা এবং শিক্ষকদের উচিত শিশুদের ছোটবেলা থেকেই জিমন্যাস্টিকসে উৎসাহিত করা।’

যেখানে শেখার সুযোগ আছে

ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় জিমন্যাস্টিকস শেখার সুযোগ আছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ (বিকেএসপি) বেশ কিছু সংস্থার মাধ্যমে জিমন্যাস্টিকসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ আছে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ: ৬২/৩, পুরানা পল্টন, ঢাকা, টেলিফোন: ৪১০৫০৫৫১, ৪১০৫০৫৫২

বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন: বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ৩য় তলা (ভিআইপি গেট), ঢাকা। ফোন: ৭১৬১৪৯৪

ঢাকা জিমন্যাস্টিক স্কুল: গ্রিনরোড, ঢাকা। ফোন: ০১৯০৮৬৬৭৮৫৯

জামিনি একাডেমি: নিকেতন, গুলশান। ফোন: ০১৫৮১১৮৮০৬০