নিজস্ব প্রতিবেদক
![]() |
জানাজা শেষে কাশেমের মরদেহের কফিন নিয়ে মিছিল বের করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আবুল কাশেমের কফিন নিয়ে বুধবার রাতে মিছিল হয়েছে। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছিল। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতারা।
আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাশেমের (২০) মৃত্যু হয়।
আজ রাত নয়টার কিছু আগে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে নিহত আবুল কাশেমের মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয়। এরপর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো মরদেহটি রাখা হয়। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়।
জানাজা শুরুর আগে কাতারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে আমাদের ভাইকে হত্যার পেছনে যারা সক্রিয়ভাবে থেকেছে, হুমকি দিয়েছে ও পরিকল্পনা করেছে, তারা সবাই ফ্যাসিবাদী লীগ। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার বিন্দু পরিমাণ অধিকার রাখে না।’
আইনিভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির এই সদস্যসচিব। পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ারও দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘শহীদ ভাইয়ের লাশের শপথ নিয়ে বলছি, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর জুলাই বিপ্লবীদের আওয়ামী লীগের হাতে শহীদ হতে হচ্ছে। এটি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সম্মিলিত ব্যর্থতা। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য আপনারা আর কত সময় নেবেন? আপনারা দ্রুততম সময়ে আইনগত প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।’
এ সময় হাসনাত বলেন, ‘আবুল কাশেমের লাশ সামনে রেখে শপথ নিচ্ছি, আওয়ামী লীগকে আমরা নিষিদ্ধ করে ছাড়ব। এই দেশে হয় আওয়ামী লীগ থাকবে, নয়তো আমরা থাকব।’ সাংস্কৃতিকসহ নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে বৈধতা উৎপাদন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরিফ সোহেল বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরও বিপ্লবীদের শহীদ হতে হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, অন্তর্বর্তী সরকার তাহলে কী করছে? কেন ফ্যাসিবাদীদের বিচার হচ্ছে না?’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে শুধু নিষিদ্ধ নয়, যারা তাদের পক্ষ নিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করছে, হামলা করছে, প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সরকার এই কাজে ব্যর্থ হলে বিপ্লব সম্পূর্ণ করার কাজ বিপ্লবীরাই নিজেদের হাতে তুলে নেবে।
এই নেতাদের বক্তব্যের পর আবুল কাশেমের জানাজা হয়। শিক্ষার্থীসহ কয়েক শ মানুষ এতে অংশ নেন। জানাজা শেষে কাশেমের মরদেহের কফিন নিয়ে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’,‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
মিছিলটি শাহবাগ মোড়ের আগে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছে, তাদেরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশীদ, আহনাফ সাঈদ খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। তাঁরাও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। রাত সোয়া ১০টায় সমাবেশ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ থেকে চলে যান।
![]() |
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মো. কাশেমের জানাযা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |