আবদুর রহিম হারমাছি

ঢাকায় একটি প্রদর্শনীতে পাকিস্তানি পণ্যের পসরা; সেখানে দেশটির হাই কমিশনারও ছিলেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানমুখী; চলছে অতীত ভুলে সম্পর্ক বিনির্মাণের প্রয়াস; রাজনীতির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করার পদক্ষেপও এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনা কতটা?

সম্প্রতি দ্য ডিপ্লোমেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণে বাংলাদেশকে ভারতের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিজেদের কাছে আনতে পারলে ষোল আনাই লাভ পাকিস্তানের।

তার পরিবর্তে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখানো হয়নি বিশ্লেষণী ওই প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়, অর্থনীতি নিয়ে খাবি খাওয়া পাকিস্তানের বাংলাদেশকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ভারত বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশকে, তা দিতে পারবে না পাকিস্তান।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়, যা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বাণিজ্যিক লেনদেনের বহু গুণ। ফলে সেই দিক থেকেও বাংলাদেশের কাছে ভারতের বিকল্প হতে পারবে না পাকিস্তান।

পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে তা আরও স্পষ্ট হয়। বাংলাদেশের মোট আমদানি ও রপ্তানির তুলনায় পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি ১ শতাংশেরও কম।

গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ মোট ৬ হাজার ৬৭২ কোটি ৫১ লাখ (৬৬.৭২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করে, তার মধ্যে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয় ৬২ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য।

অন্যদিকে ওই অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয় ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ (৪৪.৪৭ বিলিয়ন) ডলার। তার মধ্যে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছিল ৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পণ্য।

স্বল্প আমদানি-রপ্তানির মধ্যেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পাল্লা পাকিস্তানের দিকেই ভারী। অর্থাৎ যতটা আমদানি বাংলাদেশ করে, রপ্তানি তার চেয়ে অনেও কম হয়।

ফলে সেদিক থেকেও বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনা কম। আবার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজ হলেও যে আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাবে, তেমন কোনও আশাও দেখছেন না অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

শুধু বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি সহজ হবে বলে মনে করছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

সম্পর্কে নতুন মোড়
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ গঠনের পর শুরুতে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই স্বাভাবিক ছিল না। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান।

তারপর চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে এগিয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক। ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক ছিল বেশ নাজুক। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনায় ছড়িয়েছিল ওই সময়কালে।

শেখ হাসিনার শানসকালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল বেশ নিবিড়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নাজুক হয়ে ওঠে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর পাকিস্তানমুখী টান দেখা দেয়।

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পরের মাসেই নাহিদ ইসলাম ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে একাত্তর প্রশ্নটির মীমাংসা করতে চায় সরকার। একটি গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত করা প্রয়োজন।

এরপর নিউ ইয়র্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বৈঠক হয়। সেখানে নানা স্তরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দেন দুজনই।

এরপর কায়রোয় ডি-এইট সম্মেলনের ফাঁকেও দুজন বৈঠক করেন। সেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে একমত হন দুজন। ড. ইউনূস সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ১৯৭১ সালের বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার আহ্বান জানান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও তাতে সায় দেন।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল প্রথম বারের মতো শুরু হয়। প্রথম জাহাজটি আসে গত বছরের ১৬ নভেম্বর; দ্বিতীয়টি আসে ২২ ডিসেম্বর।

নিউ ইয়র্কে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

তার আগেই পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ির বিধান বাতিল করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানি পণ্য আমদানির পর ছাড় নিতে গেলে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার বিধান ছিল। এখন অন্য সব দেশের মতোই ১০ শতাংশ পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করেই পুরো আমদানি চালান ছাড় করানো যাচ্ছে।

এছাড়া প্রায় ২০ বছর পর বাংলাদেশ–পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ইসলামাবাদে এ সভা হতে পারে। সভায় উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি যোগাযোগ বাড়ানোয় জোর দেওয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, 'জেইসির সভা করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সভার তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আশা করছি, এই মাসের শেষ সপ্তাহে হবে।'

এই সভার আলোচ্যসূচিতে রাখার জন্য জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ১৫টি দপ্তরের প্রধানের কাছে প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দিয়েছিল ইআরডি।

যেকোনো দেশের জিইসি সভার আলোচ্যসূচি ঠিক করার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়। পরে সেই প্রস্তাবগুলো থেকে খসড়া আলোচ্যসূচি ঠিক করে তা সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠাতে হয়। দুই দেশের অনুমোদনের ভিত্তিতে আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত করা হয়।

২০০৫ সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে ঢাকায় অষ্টম জেইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সেটিই শেষ সভা। ওই সভায় পাকিস্তানের বাজারে শতাধিক পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)।

পাকিস্তান বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াও সহজ করেছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চালু করা নিয়েও এখন আলোচনা চলছে।

আমদানি-রপ্তানির চিত্র
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পাকিস্তানের দিকে পাল্লা হেলে রয়েছে। বাণিজ্যের পরিমাণ বেশি হলেও ভারতের ক্ষেত্রেও চিত্র একই।

বাংলাদেশের মোট আমদানির ১৮ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। অর্থাৎ চীনের পরই ভারতের অবস্থান। চীন থেকে আসে ২৫ শতাংশ পণ্য।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয় সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিপরীতে

১৫৬ কোটি ৯২ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল দেশটিতে। কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যেও চলতি অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভারতে ৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।

অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পাকিস্তানে ৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। এর বিপরীতে সে দেশ থেকে ৬২ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশ মোট ৬ হাজার ৬৭২ কোটি ৫১ লাখ (৬৬.৭২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল। অনদিকে রপ্তানি থেকে আয় করে ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ (৪৪.৪৭ বিলিয়ন) ডলার। এটা স্পষ্ট করে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের খুবই নগন্য পরিমাণ চলে পাকিস্তানের সঙ্গে।

করাচি থেকে বাংলাদেশে সরাসরি যে দুটি জাহাজ এসেছে, তাতে এসেছে ফেব্রিকস, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজ, ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট ও ডলোমাইট। এর বেশিরভাগই বস্ত্র শিল্পের কাঁচামাল।

‘ইউয়ান শিয়াং ফা ঝাং’; এই জাহাজটি পণ্য নিয়ে করাচি থেকে বাংলাদেশে এসেছিল | ফাইল ছবি

পাকিস্তান থেকে গত বছর সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে তুলা। এছাড়া আরও যেসব পণ্য আসে বাংলাদেশে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আসে সিমেন্টের কাঁচামাল।

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়, এমন পণ্যের যে তালিকা পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে রয়েছে, তার পেপার ও পেপারবোর্ড লেবেল, ছেলেদের শার্ট, মেডিক্যাল সার্জিক্যাল ও ডেন্টাল ইকুইপমেন্টও রয়েছে।

বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যে ৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, তার মধ্যে ছিল কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক।

এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে পাকিস্তানে; বিপরীতে দেশটি থেকে আমদানি হয় ৮৪ কোটি ডলারের পণ্য।

নতুন আগ্রহ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরপরই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে ঢাকায় তৎপর দেশটির রাষ্ট্রদূত আহমেদ মারুফ। অর্থ উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করছেন তিনি।

তার ধারাবাহিকতায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। দলে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে তখন বিজনেস কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে এফবিসিসিআই ও এফপিসিসিআই একটি সমঝোতা চুক্তিও সই করে।

ঢাকায় বাণিজ্য ‍উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকায় সফরকালে এফপিসিসিআইয়ের সভাপতি আতিফ ইকরাম বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, ওষুধ, চামড়া, মেশিনারিজ, রাসায়নিক ও আইসিটি খাতে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পাকিস্তানি হাই কমিশনার মারুফ সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে গত ১৫ বছরে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কে যে ভাটা ছিল, তা কাটিয়ে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমানের সঙ্গেও বৈঠকে রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, যৌথ বিজনেস কাউন্সিল, উভয় দেশের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সার্টিফিকেট গ্রহণ, হালাল খাদ্য আমদানি-রপ্তানি, এসএমই, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত নিয়ে আলোচনা করেন।

তবে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর আলোচনায় করাচি থেকে সরাসরি বাংলাদেশে জাহাজ আসার খবরটিই বড় খবর হয়ে আসে।

পাকিস্তান হাই কমিশন গত ১৩ নভেম্বর এক্স হ্যান্ডেলে এটাকে ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ’ হিসাবে তুলে দরে।

পাকিস্তানের বেশি লাভ
অর্থনীতির গবেষক ও আমদানি-রপ্তানিকারকরা মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভৌগলিক দূরত্বের চ্যালেঞ্জের পরও উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়ানো ও সহজ করার সুযোগ আছে।

তারা বলছেন, সরাসরি জাহাজ ও বিমান চলাচল চালুর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, উভয় দেশের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সার্টিফিকেট গ্রহণ এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত পারস্পরিক বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বাণিজ্য কয়েকগুণ বাড়ানো যাবে, যাতে উভয় দেশ লাভবান হতে পারে।

তবে পাকিস্তানের যে বেশি লাভ হবে, সেটাও বলছেন তারা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের এতদিন তৃতীয় দেশের বন্দর ব্যবহার করে কন্টেইনার আনা-নেওয়া করা হতো। এখন পাকিস্তানের করাচি থেকে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরিবহন খরচ কমায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। দুপক্ষের জন্যই ইতিবাচক হবে। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য যেহেতু পাকিস্তানের অনুকূলে, সে কারণে পাকিস্তানই বেশি লাভবান হবে।'

একই কথা বলেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

তিনি বলেন, 'পাকিস্তান থেকে মূলত হোম টেক্সটাইল ও ডেনিমের কাঁচামাল (সুতা) আসে। এই সুতা উন্নত মানের। আমাদের টেক্সটাইল মিলগুলোতে উৎপাদন হয় না। ওভেন ও নিট পোশাকের জন্য কোনও সুতা বা তুলা পাকিস্তান থেকে আমদানি হয় না। সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় হোম টেক্সটাইল ও ডেনিমের যে সুতা আমদানির খরচ কমবে। এতে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। এদিক দিয়ে আমরা লাভবান হব।'

পোশাক শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে আসা তুলা ও সুতার বাংলাদেশে যে চাহিদা, তার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই মেটানো হয় ভারত থেকে। ফলে পাকিস্তানের কাছ থেকে আনা গেলে ভারতের বাজারে ভাগ বসাতে পারবে তারা।

তবে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বল্প বাণিজ্যের দিকটি দেখিয়ে পারভেজ বলেন, 'একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু পাকিস্তানে কোনও পোশাক রপ্তানি করি না। তাদের বাজারে আমাদের পোশাকের কোনও চাহিদাও নেই। মূলত কিছু কাঁচা পাট ও ওষুধ রপ্তানি হয়। আগে চা রপ্তানি হতো, এখনও তাও হয় না। ভিন্ন এই পেক্ষাপটে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়লে বাংলাদেশে পাকিস্তানের রপ্তানি বাড়বে। পাকিস্তানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে যৎসামান্য। তাই সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, পাকিস্তানই বেশি লাভবান হবে।'