নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতীকী ছবি

ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’-এর এক প্রবন্ধে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তুমুল সমালোচনা। এদিকে একে লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বলে উল্লেখ করেছে ছাত্র সংবাদ। অন্যদিকে প্রবন্ধটির লেখক তাঁর নিজের ফেসবুক পেজে দাবি করেছেন, গবেষণার ভিত্তিতেই তিনি এই তথ্য লিখেছেন।

জানা গেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’-এর ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শিরোনামে লেখক আহমেদ আফগানীর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে লেখক লিখেছেন, ‘সে সময়ে অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন।’

প্রবন্ধটি প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে।
এরপরেই এই বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন প্রবন্ধের লেখক আহমেদ আফগানী। নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, “ছাত্রসংবাদ ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শীর্ষক একটি লেখা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই লেখার দায় সম্পূর্ণ আমার এবং আমি মনে করি এই লেখাটা সঠিক।”

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার এই মন্তব্য নতুন নয়, বহু মুক্তিযোদ্ধা, বহু গবেষক, বহু বিশ্লেষক স্বীকার করেছেন তারা যদি এই ইসলামবিদ্বেষ সম্পর্কে আগে বুঝতে পারতেন তাহলে তারা মুক্তিযুদ্ধে জড়াতেন না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার গবেষণা কাজের জন্য ১৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাদের থেকে এই মন্তব্য আমি পেয়েছি। অতএব আমি আমার মন্তব্যের জন্য বিব্রত নই।’

এদিকে প্রবন্ধটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ছাত্রশিবিরের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’। প্রকাশনাটির ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘মন্তব্যটি একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত মতামত।
আমাদের সম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকের যেকোনো ইতিবাচক মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ছাত্র সংবাদ’ মনে করে— একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ছিল, ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে সারিবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করছে, এমন অসংখ্য দৃশ্য এবং বর্ণনা ইতিহাসে সমুজ্জ্বল। মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানীদের লড়াই ছিল পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের জন্য। মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম কোন পক্ষ ছিল না। বরং তৎকালীন শাসক-শ্রেণী মুক্তিযুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামকে টেনে তাদের অপকর্মকে জায়েজ করতে চেয়েছিল। সেই সাথে আমাদের দেশেও একটি পক্ষ মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে বারবার ইসলামকে টেনে জাতিকে বিভক্ত করার হীন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য যে, মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীন বাংলা বেতার ‘আল্লাহর পথে জেহাদ’ বলে পরিচয় করিয়েছিল, যা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়—মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার মূলে ছিল ‘ইসলাম’।