প্রতিনিধি ঈশ্বরদী

শাপলা খাতুন | গ্রাফিক: পদ্মা ট্রিবিউন

ব্যাটারিচালির অটোরিকশা চালিয়ে পাঁচজনের সংসার চালান মো. শফিকুল ইসলাম (৪৭)। দিন কাটে অভাব-অনটনে। জীবনের এমন পর্যায়ে আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে এসেছে একটি সুসংবাদ। আর তা হলো, শফিকুলের মাঝের মেয়ে শাপলা খাতুন এবার নীলফামারী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। একদিকে সন্তানের সাফল্যের আনন্দ, অন্যদিকে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কারণ, তিনি শুনেছেন, মেডিকেলে পড়ালেখা করতে বেশ খরচ।

শফিকুল ইসলামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের নিকড়হাটা গ্রামে। তাঁর মেয়ে শাপলা খাতুন এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৪৮৫১ তম হয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অটোরিকশা চালিয়ে সে টাকায় সংসার চলে। পাশাপাশি ধারদেনা করে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন। এখনো কিস্তি দিতে হয়। ভবিষ্যতে মেয়ের পড়ালেখার খরচ কীভাবে বহন করবেন, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভর্তির টাকাই জোগাড় করতে পারেননি এখনো। ফলে ভর্তি করাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।’

দরিদ্র পরিবারের অনেক না পাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠলেও পড়ালেখার প্রতি প্রবল ভালোবাসা শাপলা খাতুনকে শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য পাইয়ে দিয়েছে। গ্রামের বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পাস করার পর তিনি ভর্তি হন রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০২২ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে মেয়েকে ভর্তি করান শাপলা খাতুনের বাবা। সেখানেও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য আনেন অদম্য এই ছাত্রী।

শাপলা খাতুন বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি। তবে অর্থাভাবে কোচিং করতে বা কোনো প্রাইভেট পড়তে পারেননি। নিজেই পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হবেন, এমন মনোবল ছিল তাঁর। সেই আত্মবিশ্বাস ও নিজের নিয়মিত পড়ালেখার ফসল হিসেবে এই ফল করেছেন তিনি।’

এই গ্রামে প্রথম কোন মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে, আমরা সবাই গর্বিত। তবে যদি অর্থের অভাবে শাপলার স্বপ্ন পূরণ না হয়, তবে তা আমাদের সবার জন্য দুঃখের বিষয় হবে।

মঙ্গলবার সকালে শাপলা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আধা পাকা বাড়ির দুই কক্ষের একটিতে থাকেন তিনি ও তাঁর এক ছোট বোন। খাটের এক কোণে সাজিয়ে রাখা কিছু বই। সেখানে বসেই লেখাপড়া করেন তিনি।

ওই গ্রামের গৃহিণী আসমাউল হুসনা বলেন, ‘এই গ্রামে প্রথম কোন মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে, আমরা সবাই গর্বিত। তবে যদি অর্থের অভাবে শাপলার স্বপ্ন পূরণ না হয়, তবে তা আমাদের সবার জন্য দুঃখের বিষয় হবে।’

ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এসএম রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শাপলা খাতুন মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় এই সাফল্য পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর আগামী দিনের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে শিক্ষানুরাগী লোকজন যেন এগিয়ে আসেন, সে আহ্বান জানান তিনি।’