রাফিয়া আলম
জীবনকে যতটা উপভোগ করবেন, জীবনের প্রতি যতটা যত্নশীল থাকবেন, ততটাই সফল হবেন । মডেল: ফাহমিদা ফাতেমা জাহান সামান্তা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কখন কীভাবে পাল্টে যায় জীবনের রং, কে বলতে পারে! সময়ের আবর্তে জীবন যেখানেই পৌঁছে যাক, ভালো থাকার চেষ্টা আপনাকে করতেই হবে। তবে বাস্তবতা হলো, জীবনের নানামুখী চাপে আমরা জীবনকে উপভোগ করতে ভুলে যাই। ভুলে যাই ভালো থাকার কিছু মূলমন্ত্র। অথচ জীবনের অধিকাংশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এগুলো খুবই জরুরি।
প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পর আর্থিক চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন হাতে গোনা কিছু মানুষ। আর্থিক বিষয়টাই নির্দিষ্ট কোনো পেশাকে ধরে রাখার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেকের জন্য। অথচ জীবনে সত্যিকার সাফল্যের জন্য যে স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, তা অনেকেই ভুলে যান।
তাই হারিয়ে যায় সু–অভ্যাসের চর্চা। অথচ কেউ যখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, তখন এই অভ্যাসগুলোই তাঁর জন্য দারুণ ইতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়।
সুখী হওয়ার জন্য নিজের অপূর্ণতাগুলোকেও ভালোবাসতে শিখতে হবে । মডেল: ফাহমিদা ফাতেমা জাহান সামান্তা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সফল বলতে সাধারণভাবে আমরা ধনী ব্যক্তিদের বুঝি। আদতে সুখ কিন্তু আপনার অফিসকর্তার চেয়ারে লুকিয়ে থাকে না! আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি, ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক—এসবের মধ্যেও নেই সুখ কিংবা জীবনের সাফল্য।
বরং আপনি জীবনকে যতটা উপভোগ করবেন, জীবনের প্রতি যতটা যত্নশীল থাকবেন, ততটাই সফল হবেন। ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্যও এ কথা সত্য। এমনটাই জানালেন মানবসম্পদবিষয়ক প্রতিষ্ঠান করপোরেট কোচের মুখ্য পরামর্শক যিশু তরফদার।
নিজের যত্ন নিন
কোনো কিছুর জন্য নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আপস করবেন না। কাজের সময় কাজ নিশ্চয়ই করবেন। প্রয়োজনে বিরতিও নিন। রোজ অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমান। নিজের ভালো লাগার কাজে রোজ কিছুটা সময় ব্যয় করুন। অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন। শরীরচর্চা করবেন। এ ধরনের অভ্যাস বজায় রাখলে আপনার শরীর, মন ও মস্তিষ্ক ভালো থাকবে। চ্যালেঞ্জের মুখে আপনি ভেঙে পড়বেন না। যে চ্যালেঞ্জের মুখেই আপনি পড়ুন না কেন, নিজেকে ভালোবাসুন সব সময়।
সম্পর্কগুলোকে গুরুত্ব দিন
মা-বাবা, সন্তান, জীবনসঙ্গী, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন—সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার বিষয়ে মনোযোগী হোন। ধরা যাক, অফিসকর্তা আপনাকে চাপে রেখেছেন। নিজের বাড়িতে রাগারাগি করে যদি আপনি এই চাপের বিস্ফোরণ ঘটান, তাহলে কিন্তু আপনি চ্যালেঞ্জটায় হেরে বসবেন। বরং একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে আপনার উচিত কর্মক্ষেত্রের চাপ বাড়িতে বয়ে না আনা। যেখানে যা-ই ঘটুক, ব্যক্তিগত সম্পর্কে তার প্রভাব পড়তে দেবেন না।
দেখবেন, বাইরের জগতের চ্যালেঞ্জ সামলানো সহজ হয়ে যাবে। একইভাবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো চাপ সৃষ্টি হলে কর্মক্ষেত্রে সেটির প্রভাব পড়তে দেবেন না। সব পরিস্থিতিতেই বন্ধুদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখুন।
আর্থিক বিষয়কে চাপ হিসেবে নেবেন না
আপনি হয়তো কেবল রোজগারের জন্যই কাজ করছেন। তবু নিজের কাজটাকে ভালোবাসতে চেষ্টা করুন। সম্মান করুন নিজ পেশাকে। আর যতটা সম্ভব, খরচ কমিয়ে ফেলুন। দুর্দিনের জন্য সঞ্চয় করুন। রোজগারের তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় কম রাখুন। সম্ভব হলে মূল পেশার বাইরে টুকিটাকি কাজের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করুন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিস্তর সুযোগ রয়েছে এখন দেশে।
কিংবা ধরা যাক, আপনি হাতের কাজ জানেন। ছোট পরিসরে সেই কাজকেও ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। বাড়তি কিছু রোজগার করতে পারলে তা হুট করে খরচ করে ফেলবেন না। আর অবশ্যই চেষ্টা করুন কোনো পরিস্থিতিতেই ধারদেনা না করতে। অতীতে বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে থাকলেও তা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করে ফেলুন।