প্রতিনিধি শরীয়তপুর

মিলন ব্যাপারীর স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। রোববার সকালে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর পাশে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মিলন ব্যাপারী (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ সদস্যরা মারধর করে তাঁকে হত্যা করেছেন। তবে পুলিশের ভাষ্য, অসুস্থ হয়ে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

মারা যাওয়া মিলন ব্যাপারী উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা এলাকার আমজাদ ব্যাপারীর ছেলে। এলাকায় পদ্মা সেতুর পাশে একটি ছোট মুদিদোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি। মিলন পাঁচ সন্তানের বাবা ছিলেন।

ডিবি পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নওশের আলী আট সদস্যর একটি দল নিয়ে জাজিরার বিকেনগর ও নাওডোবা এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে যান। তখন বিকেনগর পূর্ব কাজীকান্দি এলাকা থেকে মোজাম্মেল মাঝি (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে ১০০ গ্রাম গাজাসহ আটক করা হয়। আটক মোজাম্মেলের নামে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের ৯টি মামলা আছে। মোজাম্মেলকে নিয়ে তাঁর এক সহযোগী জামাল ব্যাপারীকে ধরতে পুলিশ সদস্যরা পশ্চিম নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর পাশে অভিযান চালান। তখন জামালের আত্মীয় মিলন ব্যাপারীর বাড়িতে যান পুলিশ সদস্যরা। ওই সময় মিলন ব্যাপারীকে ঘর থেকে বের করে তাঁর দোকানের সামনে আনা হয়। সেখানে তাঁকে মারধর করার অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিলন ব্যাপারীর চিৎকার শুনে তাঁর স্ত্রী রেনু বেগম দোকানের সামনে এসে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। অন্য স্বজনেরা ছুটে এসে মিলনকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। সেখান থেকে মিলনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ঘটনার সময় দোকানে ছিলেন মিলনের ছেলে আল আমীন। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন মানুষ ডিবি পুলিশের পরিচয়ে দিয়ে আমার বাবাকে মারধর করছিল। এমন পরিস্থিতি দেখে মাকে ডেকে আনি। মারধরের কারণে আমার বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ডিবি পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে সেখান থেকে চলে যান।’

ডিবি পুলিশের অভিযানের সময় মারা যান মিলন ব্যাপারী | ছবি: সংগৃহীত

রোববার সকালে হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্না করছিলেন মিলনের স্ত্রী রেনু বেগম। আহাজারি করে রেনু বলেন, ‘কয়েকজন লোক এক ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। তারা আমার স্বামীকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ছেলের চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি আমার স্বামী মাটিতে পড়ে আছে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। শরীরে হাত দিয়ে দেখি কোনো সাড়া শব্দ নেই। ডিবি পুলিশের পরিচয় দেওয়া লোকগুলো মারধর করে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তারা কেন আমার স্বামীকে মারধর করল, তা বুঝতে পারছি না। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

মাদকবিরোধী ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই নওশের আলীকে আজ ডিবি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কয়েক দফায় ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

তবে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু বকর মাতুব্বর বলেন, ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে অভিযানে গিয়েছিলেন। একজন মাদক ব্যবসায়ীকে মাদক দ্রব্যসহ আটক করেন। তাঁর বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় একটি মাদকের মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযানের সময় মিলন নামের এক ব্যক্তি তাঁর ভাগনেকে ছাড়ানোর জন্য দৌড়ে এসেছিলেন। তখন তিনি হাঁপিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য তাঁকে মারধর করেননি। এ অভিযোগ মিথ্যা। তার পরও যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় যদি পুলিশের কোনো সদস্যের দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ মেলে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।