প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে দুই দিনব্যাপী লালন উৎসবের সমাপনীতে লালন ভক্ত সাধু ও বাউলরা লালনের গান পরিবেশন করেন। শনিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নারায়ণগঞ্জে দুই দিনব্যাপী ‘লালন উৎসব’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে লালনভক্ত সাধু ও বাউলদের যেন মেলা বসেছিল। আজ শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এতে কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালনভক্ত সাধু ও বাউলদের মেলা বসে।

সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের বাধায় নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা পণ্ড, বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ফকির লালন সাঁইয়ের ২৫০তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে এবং বিভিন্ন স্থানে লালন মেলায় বাধার প্রতিবাদে দুই দিনব্যাপী এই ‘লালন উৎসব’-এর আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন করেন পিয়ার সাঁই। আজ সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ধীমান সাহার সঞ্চালনায় সমাপনী অনুষ্ঠান হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে লালনভক্ত সাধু ও বাউলেরা একে একে পরিবেশন করেন ‘এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘তিন পাগলে হলো মেলা’—লালন শাহের এসব কালজয়ী গান। গানের সঙ্গে উপস্থিত লালনভক্ত, দর্শকেরাও গলা মিলিয়ে মেতে ওঠেন। শিল্পীরা গানে গানে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা তুলে ধরেন।

পিয়ার সাঁই তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘লালনের গান ও বাণী প্রচারের মধ্য দিয়ে আমরা সব মানবের সম্মিলনে মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি। যে সমাজে মানুষকে জাতপাতের নামে বিভক্ত করা হবে না, ছোট করা হবে না, অপমান করা হবে না। মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল লালন সাঁইজির স্বপ্ন, আমাদেরও সেই স্বপ্ন।’

সংগঠনের উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে মানুষে মানুষে বিভাজন বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সমাজে সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে, বিভাজনের বিরুদ্ধে। আমরা একাত্তরে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, চব্বিশের আন্দোলন সে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি, একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি, সব ধর্মের স্বাধীনতা শুধু নয়, সব মত ও পথের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি চব্বিশের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান। আউল-বাউল, সুফি, সন্ন্যাসী সবার মত ও পথের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য সব আন্দোলন। শ্রেষ্ঠত্ব বা সংখ্যাগরিষ্ঠের অজুহাতে কোনো মতবাদকে দমন করা যাবে না। রাষ্ট্র সে স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, অর্ধশতাধিক মাজার-খানকা ভেঙে ফেলা হলেও, আক্রান্ত হলেও সরকারের লজ্জাজনক নীরবতা।’ তিনি বলেন, ধর্ম রক্ষার নামে যুগে যুগে সমাজে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধর্মের ওপর, মানবতার ওপর আঘাত হেনেছে। লালনের লড়াই মানবতা প্রতিষ্ঠার লড়াই। মানুষকে মানুষের মর্যাদায় মহীয়ান করার লড়াই, যে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মহামানবের মহাযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

উৎসবে ফরিদপুরের পাগলা বাবু, কুষ্টিয়ার শিরিন সুলতানা, এ্যানি খান, ফারুক খান, আরিফ, শাহজালালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লালনভক্ত ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।