আবৃতি আহমেদ

এই তো আর কিছুদিন, তারপরই উঠিয়ে রাখতে হবে সব গরম পোশাক। গুছিয়ে রাখার সময় সামান্য ভুলে নষ্ট হতে পারে এসব পোশাক। এমনটি এড়াতে তাই জেনে নিন শীতের পোশাকগুলো তুলে রাখার কিছু সঠিক নিয়মাবলি।

সোয়েটার ও মাফলার
ভারী ও মোটা সোয়েটার দীর্ঘ সময় হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলে আকার নষ্ট হয়ে নিচের দিকে ঝুলে যেতে পারে। তাই সোয়েটার ঝুলিয়ে না রেখে ভাঁজ করে রাখুন। সোয়েটার থেকে সুতা উঠে এলে হাত দিয়ে টান দেবেন না। অনেক সময় হালকাভাবে সোয়েটারটি দুই দিকে টান দিলে সুতা ভেতরে ঢুকে যায়। এমনটি না হলে যতটুকু সুতা উঠে এসেছে, ততটুকু কেটে নিন।

শীতে ব্যবহৃত পোশাক মাঝে মাঝে রোদে দিন। মডেল: তন্বী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সেলিনা আখতার বলেন, সোয়েটার ও মাফলার বারবার ধোয়া যায় না। বেশি হলে ঝেড়ে নিয়ে রোদে দেওয়া যায়। তাই এক সোয়েটার বা মাফলার প্রতিদিন না পরে বিকল্প দু-তিনটি পরা ভালো। এতে কোনোটিই বেশি ময়লা হবে না। ময়লা বোঝা না গেলে পানি দিয়ে ধোয়ার প্রয়োজন নেই। তবে প্রয়োজন হলে হালকা হাতে ধুয়ে নিতে পারেন। এ ধরনের পোশাকগুলোর বেশির ভাগই পশমিনা, কাশ্মীরি বা অ্যাঙ্গোরা–জাতীয় পশমের সুতায় তৈরি, যা বেশি ঘষামাজায় সুতার গিঁট খুলে গিয়ে নষ্ট হতে পারে। তাই পোশাকগুলো পরিষ্কার করতে হলে মৃদু হাতে অল্প পানি দিয়ে ধোয়া যেতে পারে। এ জন্য অল্প পরিমাণে তরল ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। গরম পানি কাপড়কে সংকুচিত করতে পারে, তাই ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। উলের পোশাকে ফেব্রিক সফটনার, ডিটারজেন্টের গুঁড়া, ভাতের মাড় ও ব্লিচ এড়িয়ে চলুন।

এগুলো ওয়াশিং মেশিনে না ধোয়াই ভালো। তবে যদি ধুতেই হয়, তাহলে মৃদু স্পিন সাইকেল নির্বাচন করুন, যা সর্বোচ্চ ৫০০ আরএমপি পর্যন্ত হতে পারে। ধোয়া হলে পেঁচিয়ে, চিপে বা ঝেড়ে পানি বের করা থেকে বিরত থাকুন। এতে বিশেষ করে উলের সোয়েটারের আকার বা গড়ন নষ্ট হতে পারে। বদলে দুই হাতে চেপে চেপে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে নিন। শুকানোর জন্য দড়িতে না ঝুলিয়ে সমতল স্থানে বিছিয়ে দিন। কড়া রোদ যেকোনো কাপড় বা সুতার রং ও ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করে। তাই হালকা রোদে বা বাতাসে শুকিয়ে নিন। এতে শুকাতে সময় বেশি লাগলেও কাপড়ের ক্ষতি হবে না। হালকা ভেজা সোয়েটার উঠিয়ে রাখবেন না। পুরোপুরি শুকিয়ে নিন। এরপর যেকোনো বাতাসরোধী ব্যাগে ভরে তুলে রাখুন আগামী শীতের জন্য। এক ধরনের কাপড়ের সোয়েটার একসঙ্গে রাখতে চেষ্টা করুন। যেমন ভারীগুলো একসঙ্গে এবং পাতলাগুলো আলাদাভাবে অন্য একটি ব্যাগে রাখুন। 

মোটা সিনথেটিক কাপড়ের কোট বা লেদার জ্যাকেট হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   
 
কোট ও জ্যাকেট
মোটা সিনথেটিক কাপড়ের কোট বা লেদার জ্যাকেট হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখার পরামর্শ দিলেন সেলিনা আখতার। তিনি বলেন, আগামী বছরের জন্য রেখে দিতে চাইলে ঝুলিয়ে রাখার আগে কোট বা জ্যাকেট ব্যাগে ভরে নিন। আশপাশে কয়েকটি ন্যাপথলিন বা নিমপাতা রাখুন। এতে পোকামাকড় থেকে পোশাক সুরক্ষিত থাকবে। ময়লা হলে কোট ও জ্যাকেট বাড়িতে ধোয়ার চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ, এগুলো প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে। একা হাতে ধোয়া শারীরিকভাবেও বেশ কষ্টসাধ্য। তার ওপর অনেক সময় নিয়েও শুকাতে চায় না। তাই সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ড্রাই ওয়াশে দেওয়া। ড্রাই ওয়াশে দেওয়ার সময় পোশাকের ময়লা জায়গাগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দিন।

শাল ও চাদর
হালকা রঙের শাল ও চাদরের একটু বেশিই যত্ন করতে হয়। বিশেষ করে গুছিয়ে রাখার সময়। পশমিনা শালের সুতার নকশা যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হয়। তবে ময়লা হলে শাল ও চাদর নিজেই ধোয়া যায়। ধোয়ার জন্য শ্যাম্পু বা তরল সাবান ব্যবহার করুন। ঘষামাজার প্রয়োজন নেই। কিছু সময় ভিজিয়ে রাখলে এমনিই ময়লা উঠে যাবে। ধোয়ার পর রোদে শুকান। এরপর হালকা তাপে ইস্তিরি করুন। শাল ও চাদর সুবিধামতো ভাঁজ করেও রাখতে পারেন, আবার ঝুলিয়েও রাখতে পারেন।

সোয়েটারগুলো রাখুন ভাঁজ করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ট্যাগের দিকে নজর দিন
সাধারণত যেকোনো পোশাক পরিষ্কার করার বা ধোয়ার সঠিক নির্দেশনাবলি পোশাকের গায়ে এঁটে দেওয়া ‘ট্যাগ’-এ লেখা থাকে। সব পোশাকে ট্যাগ না থাকলেও শীতের ভারী পোশাকগুলোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই নির্দেশনাবলির ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হয়। তাই উলের সোয়েটার, কাশ্মীরি শাল কিংবা চামড়ার জ্যাকেট পরিষ্কার করার আগে সেগুলোর গায়ের ট্যাগের লেখা ভালোভাবে পড়ে নিন।

পানি দিয়ে সরাসরি ধোয়ার কথা উল্লেখ করা না থাকলে, তা না করাই ভালো।