প্রতিনিধি রাজশাহী

বিজিবি সদস্যদের মারধর করে মহিষ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হওয়া মামলার আসামিদের কয়েকজন। (উপরে বা থেকে) আক্কাস, বাবলু, নয়ন ও জনি | ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মারধর করে দুটি ভারতীয় মহিষ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে বিজিবির পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে। তবে ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরও মহিষ দুটি উদ্ধার করা যায়নি। কোনো আসামিও গ্রেপ্তার হননি।

গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে গোদাগাড়ী রাজাবাড়ী এলাকায় মহিষ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের রাজাবাড়ী বিশেষ ক্যাম্পের মো. শাহ আলম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।

বিজিবির দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের মো. মুকুল (৫৫), তাঁর ছেলে হাসান (২৮), বিয়ানাবোনা গ্রামের মো. আক্কাস (৫৯), তাঁর জামাতা মো. জীবন (৩৩), মোল্লাপাড়া গ্রামের মো. বাবলু (৫০), তাঁর ছেলে মো. ডলার (৩২), একই গ্রামের নয়ন (৩৫), বিজয়নগর গ্রামের হামিদ (৩৫), মো. জনি (৩৫), তাঁর ভাই মো. টনি (৩৩), বিয়ানাবোনা গ্রামের মো. জনি (৪০) ও পবা উপজেলার গহমাবোনা গ্রামের সিজার (৩০)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনি ও টনি উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই টুনুর ছেলে। আক্কাস দেওপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি। বাবলু ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। ঘাটিয়াল বাবলু চোরাপথে ভারতীয় গরু-মহিষ আনার ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ আছে। নয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। পবা থেকে যাওয়া সিজারও ঘাটিয়াল। হুন্ডি কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নাজিরপুর গ্রামের গরু-মহিষের ব্যবসায়ী মুকুল ভারত থেকে চোরাপথে দুটি মহিষ এনে বাড়ির পাশের জঙ্গলে রেখেছেন—এ খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা অভিযানে যান। তখন মুকুল কৌশলে পালিয়ে যান। মুকুলকে না পেলেও বিজিবির সদস্যরা মহিষ দুটি জব্দ করে রাজাবাড়ী বিশেষ ক্যাম্পে আসছিলেন।
আসার পথে রাজাবাড়ী এলাকায় বিএনপির এই নেতা–কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা করেন এবং মহিষ নিয়ে যেতে বাধা দেন। তাঁরা হুমকি দেন যে মহিষ ছেড়ে না দিলে বিজিবি সদস্যদের লাশ ফেলে দেওয়া হবে। একপর্যায়ে তাঁরা অতর্কিত বিজিবি সদস্যদের ধাক্কা দেন এবং কিল-ঘুষি মেরে টেনেহিঁচড়ে মহিষ দুটি ছিনিয়ে নেন।

ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আক্কাসের মুঠোফোনে কল করা হলে তাঁর ভাই মো. শরীফ ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই বাড়িতে নাই। মহিষ নিয়ে আসলে কী হয়েছে, আমি সঠিক বলতে পারব না।’

গোদাগাড়ী থানার ওসি রুহুল আমিন রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় বলেন, মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মহিষ দুটি উদ্ধার করা যায়নি। এ মামলায় কোনো আসামিকে আটক করা যায়নি। ওসি জানান, পুলিশের এলআই শাখা বিজিবির মামলা তদন্ত করে। তদন্ত কর্মকর্তাকে বলা হয় ‘লিয়াজো ইন্সপেক্টর-বিজিবি’ সংক্ষেপে এলআই বিজিবি।