এম এ হান্নান
তীব্র শীতে আমাদের মতোই জড়সড় হয়ে পড়ে গাছ। এ সময় গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে পাতা। বৃষ্টিহীন শীতের এই রুক্ষ সময়ে গাছের যত্নে পাঁচটি বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
শীতের সময় সকালবেলা গাছে পানি দেওয়া ভালো | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
১. পানি দিচ্ছেন তো পরিমিত?
শীতে গাছে খুব বেশি পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কারণ, প্রকৃতিতে ঠান্ডা থাকায় রাতের দিকে কুয়াশায় গাছ ও গাছের গোড়া ভেজা থাকে, তাই দিনে একবার পানি দেওয়াই ভালো।
শীতের সময় সবচেয়ে ভালো সকালবেলা পানি দেওয়া। তাতে করে গাছ তার নিজের চাহিদামতো পানি শোষণ করে নেওয়ার পর অতিরিক্ত পানি সূর্যতাপে বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।
গাছের পাতায় যেন ধুলা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
২. পাতায় ধুলাবালু জমছে না তো?
বৃষ্টিহীন শীতের এই রুক্ষ আবহাওয়ায় শুধু পানি দিলেই তো আর হবে না, বাগান রাখতে হবে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন। ধুলাবালুর কারণে গাছের পাতায় ধুলার স্তর পড়ে যায়। এতে পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে বাধাগ্রস্ত হয় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, ব্যাহত হয় গাছের খাদ্য তৈরি।
এমন হলে পাতায় পানি স্প্রে করে ধুলা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছের সংখ্যা কম হলে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে আলতো করে গাছের পাতাগুলো মুছে পরিষ্কার করা দিতে পারেন।
বাগানে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
৩. গাছের গোড়ায় মালচিং ব্যবস্থা
বাগানে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করে গাছের গোড়ায় মালচিংয়ের ব্যবস্থা করে দিন। আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে মাটিকে ঠান্ডা রাখতে মালচিং বিশেষ উপকারী। সাধারণত বাগানের শুকনা ঝরাপাতা, পরিষ্কার করা আগাছা, নারকেলের আঁশ, খড়কুটো দিয়ে গাছের চারপাশের মাটির উপরিভাগ ঢেকে দিতে পারেন। এতে করে মাটি সহজে আর্দ্রতা হারাবে না।
সরাসরি মাটির সংস্পর্শে পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে শীতের ফল স্ট্রবেরি। তাই চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন পর স্ট্রবেরির বেড বা টবের মাটি খড়কুটো দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন।
ঠিকভাবে ফুলের পরাগায়ন না হলে গাছে ফুল হলেও কিন্তু ফল হবে না | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
৪. গাছে ফুল আসে কিন্তু ফল হয় না?
শীতে লতাজাতীয় সবজির মধ্যে সবার আগে থাকে লাউ, মিষ্টিকুমড়া। কিন্তু অনেকেরই অভিযোগ থাকে, গাছে ফুল হয় কিন্তু ফল হয় না। কিংবা ফল হলেও ছোট অবস্থায় পচে যায়—এই সমস্যার মূল কারণ, ঠিকভাবে ফুলের পরাগায়ন না হওয়া। সমাধান, ফুলের কৃত্রিম বা হাত পরাগায়ন।
লাউ, মিষ্টিকুমড়ার মতো চালকুমড়া, করলা, কাঁকরোল, পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল ও শসা এবং ফলের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলের হাত পরাগায়ন করার প্রয়োজন হয়।
রোগাক্রান্ত ও মরা ডালপালা ছাঁটাই করলে এমনি ফুলে ফুলে ভরে থাকবে গাছ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
৫. শীতেও ডালপালা ছাঁটাই করবেন?
বছরের যেকোনো সময়ই হোক, গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালপালা দেখামাত্রই ছাঁটাই করতে হবে। ফল তোলার পর মরা মুকুল, বোঁটাসহ ফলগাছের ডগা ভেঙে দিতে হবে। যেসব গাছের নতুন শাখায় মৌসুম এলে ফুল ও ফলের সংখ্যা বেড়ে যায়, সেসব গাছের মৌসুমের আগে ডাল ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন পড়ে। শীতে যেসব গাছের ডাল ছেঁটে দিতে হয়, সেসবের মধ্যে আছে গোলাপ, ফুরুশ, হাসনাহেনা ও স্থলপদ্ম। আর ফলের ক্ষেত্রে ফল তোলার পর মরা মুকুল, বোঁটাসহ ফলগাছের ডগা ভেঙে দিতে হয়। তাতে করে নতুন গজানো ডালে পরে অধিক সংখ্যায় ফল ধরে।যেকোনো ফল বা সবজি যেমন টমেটো কিংবা বেগুন তোলার সময়, সরাসরি হাত দিয়ে টেনে তোলার চেয়ে কাঁচি দিয়ে কেটে সংগ্রহ করা ভালো। না হলে ফল ছিঁড়তে গিয়ে গাছের কাণ্ড চিড়ে যেতে পারে এবং পরে সেখানে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে।