আলতাফ পারভেজ
৯ মাসের যুদ্ধ শেষে এসেছে বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে বিজয়ের উল্লাসে সাধারণ মানুষ | ছবি: অমিয় তরফদার |
অপর জাতির অধীনে, উপেক্ষায়, নিপীড়নে যাঁরা থাকেন, তাঁরা জানেন স্বাধীনতা কত জরুরি। তাঁরা বোঝেন মুক্তি কত প্রয়োজন; কেন এর চেয়ে বড় চাওয়া থাকে না আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মানুষ সেটাই পেয়েছিল। এ এক হিরণ্ময় অর্জন। শোক আর অশ্রুর নদীকে ছাপিয়ে ১৬ ডিসেম্বর উদ্বেল আনন্দে ভেসেছিল চরাচর। বাংলার জনজীবনে এমন সময় আর আসেনি কখনো। শত শত বছরের ইতিহাসে এমন রাজনৈতিক প্রাপ্তির নজির আর ছিল না এই তামাটে জাতির। রাজদণ্ড আর রাজভয় পেছনে ফেলে তরুণ-তরুণীরা সেদিন নিজেদের রাজধানীতে ফিরেছিল বিজয়ীর বেশে—যে শহর থেকে কুকুরের মতো তাঁদের তাড়িয়ে দিতে নেমেছিল পাকিস্তান বাহিনী ২৫ মার্চ। বারুদে-স্লোগানে বীরোচিত এক ফেরা ছিল সেটা। পোড়ামাটিতে নতুন প্রাণ জাগানোর শপথ নিয়ে ফিরছিল ক্লান্ত যোদ্ধাদল।
সেই ১৬ ডিসেম্বরের ৫৩তম বার্ষিকী আজ। যাঁদের বয়স ৫২ বছরের কম, তাঁরা ওই দিনটি দেখেননি। এটিও অনুমান করছি, ৬০ বছরের কম বয়সীদেরও একাত্তরের ডিসেম্বরের বিস্তারিত স্মৃতি নেই আজ আর। দেশে ষাটোর্ধ্ব নাগরিক আছেন দুই কোটিরও কম। বাকিদের বড় অংশেরই স্বাধীনতাসংগ্রামের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে সে কারণেই কি টান পড়েছে ইদানীং? নাকি এর সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আরও কারণ আছে? সময় যত গড়াবে ৫৩ বছর আগের শপথগুলো কি তবে তত ফিকে হবে? সশস্ত্র যুদ্ধে স্বাধীন হওয়া অন্য দেশের বেলায়ও কি এমনি ঘটে?
বিশ্বের সবচেয়ে উৎকট বৈষম্যে ভরা সমাজ এখন বাংলাদেশ। দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে এ দেশেরই বিশ্বাসঘাতক কুলীন সমাজের একাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা গত জুন পর্যন্ত ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪।
অসাম্যই ছিনিয়ে নিয়েছে আবেগ
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তাৎক্ষণিকভাবে একটা ভূখণ্ড, রাজধানী, পতাকা, জাতীয় সংগীত ইত্যাদি পেয়েছিলাম আমরা। তার চেয়েও বড় বিষয়, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে গড়ার আত্মবিশ্বাস পেয়েছিল সেদিন সাড়ে সাত কোটি মানুষ। এই মানুষদের প্রধান শপথ ছিল সমতা, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার কায়েম করবে তারা বাংলার সমাজে। ১৬ ডিসেম্বর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশ্বাস করেছিল, এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব, এটা করতেই হবে। কিন্তু শিগগিরই লাইসেন্স-পারমিট নিয়ে কাড়াকাড়ি এবং অবাঙালিদের সহায়-সম্পত্তি দখল শুরু হয়। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, যুদ্ধকালীন ২৬৫ দিনের পর ১৭ ডিসেম্বর থেকেই আমরা পুরোনো রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতরই ঢুকে যেতে শুরু করেছিলাম ধীরে ধীরে—আইনগতভাবে, প্রশাসনিকভাবে।
পাকিস্তানের দাপুটে সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে গিয়ে একাত্তরে গ্রাম-শহর ছিল বিধ্বস্ত, বিপন্ন, নিঃস্ব। প্রতিপক্ষের বর্বরতার চিহ্ন ছিল যত্রতত্র। তবু কারোরই মনে হয়নি সমতাবাদী একটা সমাজের চেয়ে কম কিছু তাদের লক্ষ্য হতে পারে। কেউ সেদিন মানবিক মর্যাদার প্রশ্নে আপস করার কথা ভাবেননি। হিন্দু-মুসলমানে বৈরিতা কিংবা জাতিগত সংঘাত নতুন দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে, এমনটা ভাবতেই পারেননি কেউ।
কোথায় গেল সেসব লক্ষ্য? বিশ্বের সবচেয়ে উৎকট বৈষম্যে ভরা সমাজ এখন বাংলাদেশ। দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে এ দেশেরই বিশ্বাসঘাতক কুলীন সমাজের একাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা গত জুন পর্যন্ত ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪। ব্যাংক খাতে মোট আমানতের ৪২ ভাগ এদের হাতে। অথচ এরা ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারী নাগরিকদের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
১৯৭২ সালে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব ছিল ৪টি। ১৯৭৫ সালে সেটা হয় ৪৭টি। ১৯৯০ সালে দাঁড়ায় ৯৪৩টিতে। এরপর দেশে সম্পদ পুঞ্জীভবনের উৎসব লেগে যায়। জোয়ার শুরু হয় সম্পদ পাচারের। সম্প্রতি হিসাবপত্র বেরিয়েছে, বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
একটি দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়া লক্ষণ হিসেবে ভালো। সমৃদ্ধিই তো দরকার। স্বাধীনতা সমৃদ্ধির জন্যই চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সম্পদ বৃদ্ধি সমাজের নিচুতলায়ও সমানতালে হচ্ছে কি না? মুক্তিযুদ্ধ চেয়েছিল সুযোগ ও সম্পদের সুষম বণ্টন। সেটা হলো কি?
এখনো দিনে দুই ডলারের কম আয় করে দেশের ১৯ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ, তিন-চার কোটি মানুষের পরিচয় এখনো ‘দরিদ্র’। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকীতেও প্রায় এক কোটি মানুষ আছেন ‘হতদরিদ্র’ নামে। ‘বিজয় উৎসব’ নিয়ে এসব হতদরিদ্র মানুষের এখন আর আবেগ কাজ করে না। তাদের আবেগ ছিনিয়ে নিয়েছে অসাম্য। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কিছুদিন আগে তথ্য দিলেন, দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে ১০ শতাংশ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বড় বিপর্যয় এভাবেই ঘটেছে।
নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই গর্বের সঙ্গে শোনান, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। কিন্তু ধনবৈষম্য ও শ্রেণিবৈষম্যে যে দেশটা বিশ্বের সেরা পাঁচে আছে সেটা বলেন না। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র অসৎ মৈত্রীর মাধ্যমে এই বৈষম্য বাড়িয়েছে। এই মৈত্রীতে সময় সময় ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও সৌদি আরবের সায় ছিল। এই মৈত্রী নির্বিঘ্ন রাখতে সমাজের অন্য সব পরিসরের পাশাপাশি অর্থনীতি ও উৎপাদন জগৎ থেকে গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাজেটগুলো তৈরির সময় সেখানে গণমানুষের মতামত রাখার সুযোগ থাকেনি। গুটিকয় মানুষের পছন্দে তৈরি পরিকল্পনার পেছনে সে বাজেট ঢালা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় মানুষ ভেবেছিল নতুন দেশে ভিন্নভাবে এসব হবে।
স্বাধীনতার পর বড় এক চাওয়া ছিল ভূমি ও কৃষির সংস্কার। লাঙল যার, জমি তার হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। জলাভূমি হবে জেলেদের। গ্রামের এই মানুষেরাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান প্রতিরক্ষাব্যূহ। তারা নিজেদের গ্রাম রক্ষা করেছে, যোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে প্রতিরোধের সলতে জ্বালিয়ে রেখেছে।
সেসব মনে রেখেই যুদ্ধের আগে-পরে দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরা উর্বর জমি আর নদীগুলো কাজে লাগিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরিকল্পনার কথা বলতেন। ১৯৭২-৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসের পাশাপাশি চারা আবাদের খামার গড়ে কৃষকসমাজের পাশে দাঁড়ানোর কথা কারও কারও নিশ্চয়ই মনে আছে। ছাত্র-শিক্ষকেরা অনেকে লম্বা ছুটি নিয়ে দল বেঁধে গ্রামে যেতেন কৃষক সমাজে উদ্দীপনা তৈরির জন্য।
কৃষি সংস্কারের উন্মাদনা এত প্রবল ছিল যে আবু তাহের বা জিয়াউদ্দীনসহ বহু নেতৃস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা ভূমি ও কৃষি সংস্কার নিয়ে লিখতেন, বলতেন। কুমিল্লা সেনানিবাসের চারদিকে পরীক্ষামূলকভাবে স্বনির্ভর গ্রামগুলো গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল।
এখন এ নিয়ে একদম কিছু শোনা যায় না। খুব দ্রুত বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা বা চাল-আলুর মতো জরুরি পণ্য ‘বাজার সিন্ডিকেট’গুলোর হাতে জিম্মি হয়ে গেল। শহুরে প্রভাবশালীদের হাতে চলে গেল গ্রামের জমি ও জলাভূমির মালিকানা। এমনকি বর্গাপ্রথারও সংস্কার হলো না। নদীগুলোর একাংশ নাটকীয়ভাবে বেদখল হতে দেওয়া হয়েছে। বাকি অংশকে টেক্সটাইল কারখানার রসায়নে দূষিত করে হত্যা করা হলো। কৃষি খাত তুলে দেওয়া হলো বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের হাতে। লোকসানে–লোকসানে কৃষকসমাজ প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিঃস্ব হয়ে চলল। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেও তারা আসলে কিছু পায়নি।
দুই-তিন দশক ধরে তাদের এই হতাশার জমিনেই চাষবাস শুরু রাজনৈতিক দক্ষিণপন্থার। শাসকেরা দেখছিল পুরোনো বয়ানে, মুক্তিযুদ্ধের বাছাই করা বুলিতে আগের মতো আর সাংস্কৃতিক ধার নেই। মানুষকে সেসবে আর মুগ্ধ ও বোকা বানানো যাচ্ছে না। সেই থেকে শুরু ভিন্ন বয়ানের চাষবাস। সেই সূত্রে বাংলাদেশের সমাজ আজকে যে নতুন আদর্শিক চেহারা নিচ্ছে তাতে অনেকে উদ্বেগ দেখান। কিন্তু এটা হলো গত পাঁচ দশকের নীতিনির্ধারক রাজনীতিবিদ এবং সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ব্যর্থতা। এ দায় তাঁদের এবং তাঁদের বিদেশি মিত্রদের।
বড় ব্যর্থতা শিক্ষায়
মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতিকে আধিপত্যের জায়গায় স্থাপন করেছিল। কিন্তু গত কয়েক দশকে রাজনীতিবিদ পরিচয়টিরও আমূল বদল ঘটে গেছে।
মাঠ থেকে যাতে শিক্ষিত নেতৃত্ব তৈরি না হয়, সে জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রসংসদগুলো মুক্তিযুদ্ধের দুই দশক পর পুরোপুরি অকার্যকর করে দেওয়া হয়। রাজনীতির পরিসরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়ে নিয়েছেন ইতিমধ্যে। এই রাজনীতিবিদেরা বিভিন্ন বাছাই করা ‘দিবসে’ আবেগভরে স্বাধীনতার কথা বলেছেন। কিন্তু দেশ পরিচালনা করেছেন ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের চেয়েও চরম ঔপনিবেশিক কায়দায়।
নতুন এই ঔপনিবেশিক শক্তির সবচেয়ে ক্ষতিকর পরিণামের নজির শিক্ষা খাত।
মুক্তিযুদ্ধের পর শিক্ষা একমুখী ও যুগোপযোগী করার ব্যাপক চাহিদা ছিল। তার বদলে এখন বাংলাদেশ ২০ থেকে ৩০ রকমের শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এ রকম অনেক ব্যবস্থার সঙ্গেই দেশের সংস্কৃতি ও সমাজচাহিদার যোগ নেই।
কুলীন সমাজের স্কুলগুলোতে ব্রিটিশ পাঠক্রমে পড়ানো হয়, পরীক্ষা নেওয়া হয় ব্রিটিশদের তৈরি প্রশ্নে, ফলাফলও আসে সেখান থেকে। অন্য মাধ্যমের অনেক বিদ্যাপীঠ চলছে বহির্বিশ্বের অন্য সমাজের ভাষা ও পাঠক্রমে। এসব মাধ্যমের শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রায় অনুপস্থিত। দেশজ আদলে গাণিতিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার বদলে পাঠক্রমকে প্রতিটি সরকার দলীয় স্বার্থে সাজাতে ব্যস্ত থেকেছে। সব মিলিয়ে লাখ লাখ অদক্ষ শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটে সমাজ ভারী হয়ে আছে এখন।
এবার না হলেও অতীতে প্রায় প্রতিটি সরকার একটা করে শিক্ষা কমিশন করেছে। নারীশিক্ষার অনুভূমিক বিকাশ ছাড়া দেশে এ খাতে বড় কোনো ইতিবাচক অর্জন নেই আজও। কোনো কোনো তরফ থেকে শিক্ষা ব্যবসার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক ভাবনা–চিন্তার যোগ ঘটানো হয়েছে সচেতন কর্মসূচি আকারে। অথচ ১৯৬৯-৭০-৭১ সালের বাংলাদেশ চেয়েছিল রাষ্ট্র নাগরিকদের মর্যাদা ও অধিকার ধর্মের পরিচয়ে মাপজোখ করবে না। সেই চাওয়া থেকে ক্রমাগত পিছু হটেছি আমরা।
এর মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এটাই যে আজকের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান একটি মূল্যবোধ নিজ উদ্যোগে ধারণ করেছেন। সেটা হলো বৈষম্যবিরোধিতা। তারই ফল এ বছরের জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান। তাঁদের বৈষম্যবিরোধী এই লড়াইয়ে ৮ থেকে ১০ জন অমুসলমান তরুণও যে জীবন দিয়েছেন, তা–ও মনোযোগ পাওয়ার মতো ঘটনা।
এই অভ্যুত্থানের বৈষম্যবিরোধী, জাতি ও ধর্ম-ঊর্ধ্ব চরিত্র এবং রাষ্ট্রসংস্কারের আর্তি স্পষ্ট করে বলছে, আজকের তরুণসমাজ একাত্তরের মূল্যবোধ ধারণ করেই রাজনৈতিক আকার নিয়েছে। একাত্তরে বিপুল জাতীয় ত্যাগের পরও ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্রই যে আমাদের এগোনোর পথে প্রধান বাধা হয়ে থাকল, এই উপলব্ধিই বর্তমান প্রজন্মের বড় মুনশিয়ানা।
রাষ্ট্রকে বৈষম্যমুক্ত করতে চাওয়ার দুঃসাহসী আওয়াজের মাধ্যমে এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ১৯৭১ সালের মূল্যবোধকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ঠিক একই কারণে এই গণ–অভ্যুত্থানকে পথচ্যুত করার অপচেষ্টাও আছে।
পরিবর্তন, সংস্কার, বিপ্লব—সবকিছুতেই একদল মানুষের ভয়। তাই শুরু হয়েছে সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যাগুরু; পাহাড়ি বনাম বাঙালি; পতাকা মাড়ানো বনাম পতাকা পোড়ানো ইত্যাদি নানা আদলের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। যুদ্ধের জ্বালানি আসছে দেশের বাইরে থেকেও। এই ছদ্মযুদ্ধের লক্ষ্য জাতীয় ঐক্য ভাঙা। যে ঐক্য ছিল একাত্তরের ২৬৫ দিন এবং এ বছরের ১৫ থেকে ৩৬ জুলাই। বাংলার ইতিহাসে কেবল এই ২৮৬ দিন নাগরিকেরা রাষ্ট্রকে অগ্রাহ্য করে স্বশাসিত ছিল। এই ২৮৬ দিনের মহাফেজখানায় আমাদের যাবতীয় সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে আছে।
এ সময় ‘সেলের তালা খুলে ফেলতেই একটুকরো তীব্র রোদ এসে’ আলো ছড়িয়েছিল আমাদের ঘরে-ঘরে, চোখে-মুখে। অসাম্য আর বৈষম্যের শিকড় উপড়ে এ আলো থেকে চাইলে আমরা নতুন সূর্যোদয়ের জন্ম দিতে পারি এখনো।
ইতিহাস আরেকবার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
● লেখক: রাজনৈতিকইতিহাসের গবেষক