নুরুজ্জামান লাবু
সড়কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা | ফাইল ছবি |
'ভিড় নিয়ন্ত্রণ' করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে, যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত বিক্ষোভ বা অবরোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রায়শই ঘটনাস্থলে পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না, এবং সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ডাকতে হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশকে বর্তমানে অনেক ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হচ্ছে। অতীতের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও হতাশা লক্ষণীয়। এর ফলে পুলিশকে সাধারণ মানুষ আর তেমন ভয় পাচ্ছে না, এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নিলে তা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। যদিও ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও পুরোপুরি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) প্রধান উপদেষ্টা ও সচিবালয় এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, কিন্তু এর পরও সেসব বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। সম্প্রতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল, তার পর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। আর ২০ নভেম্বর, ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একই দিন সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মালিকরা সড়ক অবরোধ করেন।
ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পরপরই পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রদবদল করা হয়। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত বেশিরভাগ কর্মকর্তার বড় ধরনের ক্রাউড কন্ট্রোলের অভিজ্ঞতা নেই। সেই সঙ্গে পটপরিবর্তনের কারণে কেউ কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি আগ্রহী নয়। এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করছে।
ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, 'আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, তাদের যৌক্তিক দাবিগুলি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যান এবং অকারণে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্রাউড কন্ট্রোল এখন পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।'
এছাড়া, ডিএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে অনেক সময় শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে চাচ্ছেন না। তারা মনে করেন, পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পর পুলিশ ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে নিয়মিত টহল এবং চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথাগত অপরাধীদের ধরতে অভিযানও চলমান রয়েছে, এবং ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে, পুলিশকে পুরোপুরি সক্রিয় করতে হলে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন, কারণ জনগণ যদি পুলিশকে সহায়তা না করে, তাহলে পুলিশিং কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়বে।