নিজস্ব প্রতিবেদক
বাজার ভরে গেছে শীতের সবজিতে, তবে দাম কমছে না খুব একটা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি। গত সপ্তাহের তুলনায় কয়েকটি সবজির দাম আজ কমলেও বিদায়ী ঋতুর সবজির দাম বেড়ে চলেছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, বন্যার কারণে উৎপাদন কম। তাই নতুন সবজির দাম সেভাবে কমছে না। কিন্তু এসব সব মানতে নারাজ ক্রেতারা। তারা বলছেন দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অযুহাত সবসময় প্রস্তুতই থাকে। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও হাঁসফাঁস কমেনি সাধারণ ক্রেতাদের।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ভারতীয় টমেটো ১০ টাকা কমে ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, শিম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৬০-১২০ টাকা, উচ্ছে ও করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে যোগান ভালো থাকলেও সবজির দামে তার প্রভাব নেই | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে।
গত সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি কেজিতে লম্বা বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কাঁকরোলের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, দেশি শসার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, করল্লার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, ঢেঁড়সের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, দেশি পটলের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, বাধাকপির (প্রতি পিস) দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে সবজি বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, এখন যেসব সবজির সিজন শেষ সেগুলোর দাম বাড়তি। কারণ এগুলো এখন পাওয়া যাবে না।
শীতকালীন সবজির দামও কেন কমছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যার কারণে উৎপাদন ঠিক মতো হয়নি বলে এখনও সবজি ঠিক মতো ওঠেনি। তাই এখনও দাম কিছুটা বেশি।
আরেক বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সবজির দাম অনেকটাই কমে গেছে, আরও কমবে। নতুন সবজি ঠিকঠাক আসা শুরু করলেই আরও দাম কমে যাবে।
এদিকে বাজার করতে আসা কাউসার হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের দাম বাড়াতে অযুহাত সবসময় প্রস্তুতই থাকে। কোনও না কোনও অযুহাত তাদের থাকবেই।
আরেক ক্রেতা মো. মোহন বলেন, কবে শেষ ৫০ টাকার নিচে সব সবজি কিনতে পেরেছি সেটা আমরা ভুলে গিয়েছি। যারা গরীব মানুষ তারা ভালো নেই।
দাম কমেছে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ এবং চায়না আদার
গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে। চায়না আদার দাম কমেছে ২০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় আদার দাম ২০ টাকা কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
আলু ও পেঁয়াজের দামও তুলনামূলক বেশি, কিছুটা কমেছে আদার দাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আলু-পেঁয়াজের দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে বিক্রেতা শরীফ বলেন, নতুন আলু-পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত এগুলোর দাম কমার সম্ভাবনা নেই। নতুনগুলো আসলেই এগুলোর দাম অনেকটা কমে যাবে। তিনি বলেন, যদিও এখন বাজারে ভারতীয় নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে, তবে সেগুলোর দাম এখন অনেক বেশি।
এছাড়া আজ বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪-১৪৫ টাকা, সাদা ডিম ১৪০-১৪৫ টাকা।
মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়েছে ৭ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ২ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৩-১০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আর প্রতি ডজনে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা।
মাছের দামে তেমন কোনও তারতম্য নেই আজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এছাড়া আজ বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৮০০-১৭০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, কালবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৬০০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০- ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা, বেলে ১০০০-১২০০ টাকা, বোয়াল ৮০০-১০০০ টাকা, কাজলী মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, শোল ৮০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, চিতল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত
আজ বাজারে ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাশকালাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানে প্রায় সব পণ্যের দামই অপরিবর্তিত আছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটারে খোলা সরিষার তেলের দাম কমেছে ১০ টাকা।