অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থায় দলীয়করণ, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। পাঠকদের জন্য এই প্রতিবেদন কিছুটা সংক্ষেপে দুই কিস্তির প্রথমটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক

 আইসিজির লোগো | ছবি: ফেসবুক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব সহজ নয় বলে উল্লেখ করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। বৈশ্বিক এ সংস্থা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-সংঘাত প্রতিরোধে কাজ করে এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে পরামর্শ দিয়ে থাকে। মারাত্মক ধরনের সংঘাতে আগাম সতর্কতা দিয়ে থাকে আইসিজি।

আইসিজির প্রতিবেদনে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নানা সংস্কার বাস্তবায়নে কিছু সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে আইসিজি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি

শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য রাজনৈতিক সংস্কার আনার অনন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক ঝুটঝামেলাও আছে। সংস্কার কর্মসূচির দিকে নজর দিতে চাইলে ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখতে হবে। বিভক্তির জায়গাগুলোয়ও নজর দিতে হবে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ড. ইউনূস নিয়মিত বৈঠক করছেন। দলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে বৈঠক হচ্ছে, আবার আলাদাও বৈঠক হচ্ছে। ওই সব দলের নেতাদের মতামত জানতে চাওয়া হচ্ছে এবং ড. ইউনূসও তাদের তাঁর পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন।

সরকারের ভেতরকার একজন যেমনটা উল্লেখ করেছেন, ‘যদি রাজনৈতিক পক্ষগুলো সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তবে এ মুহূর্তে সবকিছুই সম্ভব। যদিও এটি একটি বড় প্রশ্ন। তাদের সংস্কারের প্রতি আগ্রহ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’

আওয়ামী লীগ বড় পরিসরে মাঠের বাইরে আছে। তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের কারণে বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। দলটি তাদের সম্পর্কে জনগণের ধারণায় বদল আনার চেষ্টা করছে। বোঝাতে চাইছে, তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, তারা সংস্কারের জন্য ড. ইউনূস ও তাঁর সহকর্মীদের সময় দিতে চায়।

দলীয় নেতাদের প্রতিশোধমূলক সহিংসতা থেকে বিরত রাখতে এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত সদস্যদের বহিষ্কারের মতো প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন বিএনপির নেতারা। দলটি সংস্কার কমিশনের কাছেও সুপারিশ করবে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা ক্রাইসিস গ্রুপকে বলেন, ‘আস্থার ঘাটতি আছে, এবং আমাদের আস্থা (জনগণের) ফিরে পেতে হবে। সর্বোপরি তা দেশের জন্য ভালো হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কার কর্মসূচির দিকে নজর দিতে চাইলে ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ বড় পরিসরে মাঠে না থাকায় বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। তবে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে। তারা বলেছে, তারা সংস্কারের জন্য ড. ইউনূস ও তাঁর সহকর্মীদের সময় দিতে চায়।

তবে ড. ইউনূসকে বিএনপি কতটা সময় দিতে চায়, তা স্পষ্ট করেনি। এ নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলছেন। তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থকদের সামলাতেও হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের অনেকেই নির্বাচনী প্রচার চালাতে আগ্রহী। বিএনপির নেতৃত্ব যদি ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, তখন দলটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করতে পারে। যে নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে।

নিজেদের দাবি পূরণের স্বার্থে দলটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, দাবি পূরণের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দুই দলই এ কৌশল ব্যবহার করেছে।

বিএনপি যে নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে পারে, সেই আভাস ইতিমধ্যে দেখাও গেছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির কয়েক হাজার নেতা–কর্মী নির্বাচনের দাবিতে ঢাকায় জড়ো হয়েছিলেন। আরও কিছু সমাবেশ হয়েছে।

সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে নজরদারিতে রাখার কাজ করবে। তবে তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কথা মাথায় রেখে দলটি ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী। কারণ, দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইতিমধ্যে তরুণ প্রজন্মের মোহ ভেঙে যাচ্ছে। পাছে তারা বিএনপি থেকেও মুখ ঘুরিয়ে না নেয়, সে কথা মাথায় রেখেছে দলটি।

বিএনপিকে ঠেকাতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই প্রধান সমর্থক—শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনী।

সরকারি একটি সূত্র বলেছে, সেনাপ্রধান অত্যন্ত ক্ষমতাবান। তিনি তাঁর ক্ষমতা দেখান না, তবে কোনো না কোনোভাবে তিনিই এ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছেন।

জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের পর বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ছাত্রদের উত্থান হয়। যদিও ছাত্ররা এখনো কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেনি। তাদের আগ্রহের জায়গা অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরেই। এ ক্ষেত্রে তারা চায় অন্তর্বর্তী সরকার বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকুক এবং বড় ধরনের সংস্কার আনুক।

তাই বলে ছাত্রদের এক পাশে সরিয়ে রাখাটা যে সহজ কাজ হবে, তা নয়। সাংবিধানিক সংস্কার, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ এবং নৃশংসতার ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য এবং ছাত্র নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ ক্রমাগত সামনে আসছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—কয়েকজন ছাত্রনেতা আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।

ছাত্র নেতারাও রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান বলে মনে করা হয়। যদিও রাজনৈতিক দল গঠন করতে সময় লাগবে। শিক্ষার্থীদের একজন বলেছেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এতটাই নোংরা যে শিক্ষার্থীরা এখন খেলায় নামলে তাঁরাও অন্য দলগুলোর মতো হয়ে যাবেন। তিনি আভাস দিয়েছেন, ফলপ্রসূ সংস্কারের পর শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন। আর এটা আগামী নির্বাচনের পর হতে পারে।

ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে একটি প্ল্যাটফর্ম করেছে। এ প্ল্যাটফর্মটি সংস্কারের পক্ষে তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থন তৈরি করতে চায়।

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ফাইল ছবি

এক পর্যবেক্ষক বলেন, ইসলামপন্থী পক্ষগুলোকে মাঠের বাইরে ঠেলে দিয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তোলার চেয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করাটা জরুরি। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সদস্যও একমত।

বাংলাদেশি এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘সংস্কারের দাবি ছাড়া শিক্ষার্থীরা কোনো মতাদর্শিক জায়গা থেকে সংঘবদ্ধ নয়। তারা কীভাবে একটি সমন্বিত দল হয়ে থাকবে, তা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি, তার একটি সেনাবাহিনী। গত ৪ আগস্ট হাসিনার দেওয়া কারফিউ কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। আর তাতে হাসিনার পরিণতি ঠিক হয়ে গিয়েছিল। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আলোচনায় সেনাপ্রধান ওয়াকার–উজ–জামান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেনাপ্রধান কিংবা একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়নি। এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেছেন, যা–ই হোক না কেন, তিনি ড. ইউনূসের পাশে থাকবেন। যেন তিনি তাঁর লক্ষ্য (মিশন) পূরণ করতে পারেন।

তবু সেনাবাহিনীর সমর্থন ধরে রাখতে গেলে অতীতে সেনা কর্মকর্তা কিংবা জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা দুর্নীতির অভিযোগের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা ও সদিচ্ছায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হবে। অথচ জনমত এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে। ওয়াকারও সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে নিজস্ব ধারণা হাজির করেছেন। সশস্ত্র বাহিনীকে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন না রেখে প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণে রাখার সুপারিশ করেছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।

আরেকটি বিষয় হলো, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকা উপদেষ্টাদের সঙ্গে অভিজ্ঞ সহযোগী বা কর্মী যুক্ত করা, যা কাজে সহায়ক হতে পারে।

একটি সরকারি সূত্র বলেছে, ‘সেনাপ্রধান অত্যন্ত ক্ষমতাবান। তিনি তাঁর ক্ষমতা দেখান না, তবে কোনো না কোনোভাবে তিনিই এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছেন।’

শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থীদের বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী এবং হেফাজতে ইসলামের প্রভাব বেড়েছে। নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ নেতা হিসেবে উপস্থাপনকারী শেখ হাসিনা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দলটিকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও ইসলামপন্থী দলগুলো আরও শক্তিশালী হয়েছে। শেখ হাসিনা পলায়নের পর যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা নিজেরাই পূরণের জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন তাঁরা।

● সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার।

● দুর্নীতি মোকাবিলা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা জরুরি।

● সংস্কার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ।

● দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থের অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া উচিত। 

একটা সময় ছিল যখন ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়ায় বাংলাদেশিদের অনেকে জামায়াতকে ঘৃণা করত। কিন্তু এখন শেখ হাসিনা প্রশাসনের নিপীড়নের ভুক্তভোগী হিসেবে সহানুভূতি পাচ্ছে তারা। গত কয়েক বছরে দলটিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো প্রয়োজনীয় সেবা খাতগুলোয় মনোযোগ দিতে দেখা গেছে। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে এ খাতগুলো অবহেলিত থাকে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থন বাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

সরকারের উচিত হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে কথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে, তার লাগাম টেনে ধরা। শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইসলামপন্থী পক্ষগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জুলাইয়ের শেষের দিকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর জামায়াতে ইসলামী, হেফাজত ও অন্য ইসলামি দলের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে শামিল হয়েছিল।

আন্দোলনে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে। দলটি তাদের নিবন্ধন ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। ড. ইউনূসকে অবশ্যই দলটিকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

ইতিমধ্যে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে ড. ইউনূসকে আপসও করতে দেখা গেছে। যেমন-আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জামায়াত–সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নিয়োগ দেওয়া, স্কুলের পাঠ্যবই পর্যালোচনা–সংক্রান্ত একটি কমিটি বিলুপ্ত করা।

ইসলামপন্থীদের প্রভাব বাড়তে থাকায় ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী অনেকে বিচলিত বোধ করছেন। এক নারী রাজনীতিবিদ প্রশ্ন করেন, ‘আমার কী হবে—যে নারী নিকাব পরে না, রাতের বেলায় কাজ করে? সত্যি কথা বলতে, ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা হলেও আমাকে আতঙ্কিত করে তুলেছে তারা।’

হাসিনার ক্ষমতাকাল থেকে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো থেকে ইসলামপন্থী দলগুলোকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করাটা হিতে বিপরীত হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল করতে পারে, এমন পদক্ষেপ এড়াতে নয়াদিল্লির এখন সাবধানে পা বাড়ানো উচিত। বরং পানিবণ্টন চুক্তি, উন্নত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক চুক্তির পর্যালোচনার বিষয়ে নতুন আলোচনার প্রস্তাব দেওয়াসহ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

এক পর্যবেক্ষক বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনোই ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ হবে না।’ তাঁর মতে, ইসলামপন্থী পক্ষগুলোকে মাঠের বাইরে ঠেলে দিয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তোলার চেয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করাটা জরুরি।

এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সদস্যও একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রত্যেকেই তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে এবং বৈধ ও শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে পারবে—যদি তারা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে মেনে নেয়।’

জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামি দল একটি জোট গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করছে। তবে রাস্তাঘাটে সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেলেও নির্বাচনের মাঠে তাদের বড় হুমকি মনে করা হয় না। তারা কখনো নির্বাচনে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের প্রশ্নে তারা বড় দলগুলোর কাছে নিজেদের অপরিহার্য বলে প্রমাণ করতে পেরেছে।

মামলা | প্রতীকী ছবি

আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর উচিত, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করা এবং বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন যুগে নিয়ে যেতে সহায়তা করা।

বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো সহিংস চরমপন্থার ঝুঁকি, যাকে ইসলামি রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে আলাদা করে বিবেচনা করা উচিত। ২০১৬ সালে ঢাকার একটি অভিজাত বেকারিতে জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে আর বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলা হয়নি। তবে হাসিনার পতনের পর নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতির সুযোগে এ হুমকি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ পেয়ে ইতিমধ্যে ফায়দা নিতে শুরু করেছে কিছু নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন। গত ২৬ আগস্ট চরমপন্থী সংগঠন আনসার আল ইসলামের নেতা মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ–সংশ্লিষ্ট অভিযোগে কারাগারে ছিলেন। এক ব্লগার হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তিনি ইতিমধ্যে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন।

জনগণের প্রত্যাশা ধরে রাখা
গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদি জনসমর্থন ধরে রাখতে না পারে, তাহলে এই সরকারকে হয়তো একটি আগাম নির্বাচন দিতে হবে। আর এটা হলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে বিএনপি। তবে ক্ষমতায় গেলে দলটিকে হতে হবে সংযত। যদি শেষ পর্যন্ত এটা ঘটে (বিএনপি ক্ষমতায় আসে), তাহলে বাংলাদেশ আবারও লেজুড়বৃত্তি, পেশিশক্তি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথেচ্ছ ব্যবহারের রাজনীতিতে ফিরে যাবে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়বে দেশটির ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা। পাশাপাশি রাষ্ট্রসংস্কারের বিরল যে সুযোগ এসেছে, তা–ও হাতছাড়া হয়ে যাবে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যদি বিদ্যমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি অরাজকতায় রূপ নেয়। এ ক্ষেত্রে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী হয়তো ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসবে। এতে দেশটিতে আবার সামরিক শাসন শুরু হতে পারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব পক্ষের উচিত, এ রকম কিছু একটা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সজাগ থাকা।

দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে জনসমর্থন ধরে রাখতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এ জন্য ধীরগতিতে হলেও সরকার যে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পেরেছে, তা দেখাতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে আসার মতো বিষয়গুলোয় এই সরকার অবশ্য ইতিমধ্যে কিছু সাফল্য দেখিয়েছে। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ যুক্ত হবে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গুম হওয়া মানুষের বিষয়ে তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় কমিশনও গঠন করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে জো বাইডেন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কাজে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাবে ওয়াশিংটন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই রাজনৈতিক সমর্থন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বেশ গুরুত্ববহ। এদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা। সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদের পাশাপাশি নয়াদিল্লির কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত হত্যা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এ অবস্থান জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন | প্রতীকী ছবি

শেখ হাসিনার সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা এখন প্রতিনিয়ত সামনে আসছে। এরপরও বর্তমানে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটাই অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায়। আসছে বছরগুলোয় এই আকাঙ্ক্ষা কীভাবে ধরে রাখা যায়, সেটা চিহ্নিত করতে হবে ইউনূস সরকারকে। পাশাপাশি সংস্কারকাজে ধীরে ধীরে গতি আনতে হবে। একটি নির্বাচন আয়োজনের পথও তৈরি করতে হবে।

মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। এর মধ্যে একটি হতে পারে রাষ্ট্রীয় সেবাদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে গেঁড়ে বসা দুর্নীতি মোকাবিলা। সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পারলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরবে। পুলিশকে সড়কে ফেরাতে পারলে ঢাকার তীব্র যানজট মোকাবিলায় তা কাজে লাগবে। বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্থনীতির জন্য যেমন আশীর্বাদ হতে পারে, তেমনি এতে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে হওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো প্রত্যাহার করলে তা কেবল জনপ্রিয় হবে না, একই সঙ্গে সব প্রভাবমুক্ত হয়ে বিচারকদের জন্য সত্যিকারের দায়িত্ব পালনের পথ তৈরি হবে।

দৈনন্দিন কাজের গতি বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে উপদেষ্টার সংখ্যা আরও বাড়ানো। কারণ, বর্তমানে কিছু উপদেষ্টা একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। দেখে মনে হচ্ছে, এটা তাঁদের জন্য চাপ হয়ে গেছে। আরেকটি বিষয় হলো, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপদেষ্টা নয়তো এ ধরনের কোনো দায়িত্বে আনা। এটা করা গেলে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা নেই এমন উপদেষ্টাদের জন্য তা সহায়ক হবে। এ ছাড়া সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বিষয়টি পর্যালোচনা করা উচিত। পাশাপাশি কমিশনে সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব রাখতে কমিশনগুলোয় আরও সদস্য যুক্ত করা যেতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকার জনসমর্থন ধরে রাখতে পারলে তা দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহত করতে কাজে লাগবে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কাজ করতে চায়, তাতে ব্যাপক জনসমর্থন থাকলে কেউ সরকারের পতনের অপচেষ্টা চালালেও এর জন্য রাজনৈতিকভাবে চড়া মূল্য দিতে হবে। একই সঙ্গে যাঁরা আগাম নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদেরও দমিয়ে রাখা যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কার কমিশনগুলোর উচিত হবে, ছাত্র ও সেনাবাহিনীর মতো মিত্রপক্ষ ছাড়াও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা। সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে মূল প্রশ্নগুলোয় সব পক্ষের একমত হওয়াটা হয়তো সহজ হবে না। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে।

পাশাপাশি কবে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে—দ্রুত এ–সংক্রান্ত একটি পথরেখা ঘোষণা করা উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের। অনেকে দাবি জানাচ্ছেন, এই সরকারের অন্তত দুই থেকে তিন বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত। তবে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে, তাতে করে দেড় বছরের সময়সীমা বেশি বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে, যতটা সম্ভব সংবিধানের চেতনার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করা। এতে ভবিষ্যতে যাতে আদালতে তাদের কার্যক্রম অসাংবিধানিক হিসেবে বিবেচিত না হয়, সেই ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন | ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার কীভাবে করা হবে, অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সেটা সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়ে হওয়া মামলা ও শেখ হাসিনার শাসনামলে পুরোনো মামলা—উভয় ক্ষেত্রে করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তবে মামলার নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে, এমন অভিযোগও উঠতে পারে। এসবের সঙ্গে দ্রুত বিচার করার যে দাবি উঠেছে, তার ভারসাম্য রক্ষার একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বিচারব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষকে যুক্ত করলে সেটা হবে সবচেয়ে উত্তম পন্থা। ভালো–মন্দ মিলিয়ে অতীত যে অভিজ্ঞতা, সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচার করতে হলে ১৯৭৩ সালের যে আইনে এই ট্রাইব্যুনালের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, সেই আইনে সংস্কার আনতে হবে। এই ট্রাইব্যুনালে অন্তত একজন আন্তর্জাতিক বিচারক রাখতে হবে। অন্যদিকে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত। এ ছাড়া পর্যাপ্ত প্রমাণাদি ছাড়া ঢালাও মামলায় যাতে কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশকে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশ দেওয়া উচিত।

আরও বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, সরকারের উচিত হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে কথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে, তার লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করা। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারে সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল এমন অভিযোগে অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিশোধপরায়ণ এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছে, সেটা সবার কাছেই বোধগম্য। কিন্তু এতে যেটা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আর এসব পদে নতুন করে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের কারণেও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা সরকারকে সামাল দিতে হবে। দলটির নেতারা ও শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা যে জঘন্য অপরাধে জড়িত ছিলেন, সেটা স্পষ্ট। কিন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রধানতম একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। নতুন নেতৃত্বের অধীনে পুনর্গঠনের সুযোগ পাওয়া উচিত দলটির। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা সেই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। পাশাপাশি এর রাজনৈতিক ঝুঁকিও রয়েছে। আওয়ামী লীগে কিছু কট্টর সমর্থক রয়েছে। দলটিকে নিষিদ্ধ করা হলে এর সমর্থকেরা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ‘নিজের চোখে গণহত্যা ঘটতে দেখার পরও প্রায় ২০ শতাংশ বাংলাদেশি শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।’

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন
অবশেষে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা চালুর বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। বিশেষ করে, অনিয়মে ভরা বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর এটা করা হয়েছে। এটা নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজানোর চেয়েও বেশি কিছু। গত ১১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিটির মধ্যে পাঁচটিরই কাজ হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনবিষয়ক।

বাংলাদেশে নির্বাচনের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ আমলারা (জেলা প্রশাসক) সংশ্লিষ্ট আসনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে যাবতীয় নির্বাচনী আয়োজনে যুক্ত থাকেন।

২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংবিধানের ধারা বাতিলের পাশাপাশি এসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন ‘সফলভাবে’ আয়োজন করেছিলেন।

দেশে ভবিষ্যতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে তার বিস্তৃত রাজনৈতিক সংস্কারের নীতি সফলভাবে এগিয়ে নিতে হবে।

কাজেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এমন একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, যাঁদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আছে। সেই সঙ্গে তাঁদের নির্দলীয় ব্যক্তি হতে হবে। গত ৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যই পদত্যাগ করেন। তাঁরা বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের শর্তপূরণ করতে পারছেন না তাঁরা। তাই একযোগে পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত।

নির্বাচন কমিশন ছেড়ে যাওয়া কমিশনাররা বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা। আশা করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবে।

একই সঙ্গে নির্বাচনী সংস্কার কমিশন সংস্থাটির ক্ষমতা ও দায়িত্বে পরিবর্তনের প্রস্তাব করবে। অন্তর্বর্তী সরকার ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করবে বলেও জানিয়েছে।

একটি মূল বিষয় হলো এখনকার নির্বাচনী ব্যবস্থা বহাল রাখা হবে কিনা। সমালোচকদের মতে, এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া দ্বিদলীয় ব্যবস্থা কার্যকর করার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিষাক্ত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এর বিপরীতে তাঁদের যুক্তি, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চালু করা গেলে আরও বেশি রাজনৈতিক দলের জন্য জায়গা তৈরি হবে। একজন ছাত্রনেতা বলেন, আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা দরকার, যা জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।

আওয়ামী লীগ এখন কার্যত অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের আরেকটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবের কঠোর বিরোধিতা করেছে। আর এটা মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত বিএনপি এই পরিবর্তন মেনে নিতে বাধ্য হতে পারে।

তাঁদের একজন বলেন, ‘হ্যাঁ, বিএনপি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে এই পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া দলটির জন্য আত্মঘাতী হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’

পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সময়মতো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা কীভাবে বিন্যাস করা যেতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে।

আন্তর্জাতিক সমর্থন সংহত করা
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টায় সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি শক্তিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখন পর্যন্ত দেওয়া মৌখিক সমর্থন আশাব্যঞ্জক। যেমন কয়েক শ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা বাড়ানো উচিত।

ড. ইউনূসের উচিত সরকার এবং এর সংস্কার পরিকল্পনায় আরও সমর্থন আদায়ে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিতি কাজে লাগানো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশে ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ নিয়ে তিনি অসন্তোষ জানিয়েছেন। তাই নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে যত্নশীল হতে হবে।

বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত ইউনূস সরকারকে বাস্তব সহযোগিতা দেওয়া। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এ সরকারের জন্য বড় হুমকি। শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীরা বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে যে জগাখিচুড়ি অবস্থায় রেখে গেছে, তা ঠিকঠাক করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা এসব প্রতিষ্ঠান দিতে পারে। প্রতিশ্রুত কয়েক শ কোটি ডলারের অতিরিক্ত সহায়তা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ হাসিনার প্রতি দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন এবং তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের চেয়েও নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া নিয়ে তৈরি ব্যাপক ধারণা বাংলাদেশে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর কিছু সদস্যদেশ ব্যবসার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী ছিল বলে মনে করা হয়৷ এখন তাদের সেই ক্ষতি মেরামত করার সুযোগ এসেছে। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা গেলে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির | ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের উচিত অন্তর্বর্তী সরকার এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে কাজ করা। ঢাকার উচিত মানবিক সংস্থাগুলোর ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া, যাতে তারা আরও টেকসইভাবে কাজ করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে, শরণার্থীশিবিরের নিরাপত্তাহীনতা দূর করা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, আঞ্চলিক প্রভাবশালী এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থনকারী দেশ হিসেবে ইতিহাসের আলোকে বিদেশি অংশীদারদের মধ্যে ভারত একটি অনন্য অবস্থান ধরে রেখেছে। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে আসা নয়াদিল্লিকে বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। গত ১৫ বছরে একজন অজনপ্রিয় স্বৈরশাসকের প্রতি ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন বাংলাদেশিদের মধ্যে দেশটির ভাবমূর্তির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল করতে পারে এমন পদক্ষেপ এড়াতে নয়াদিল্লির এখন সাবধানে পা বাড়ানো উচিত। তার চেয়ে বরং পানিবণ্টন চুক্তি, উন্নত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক চুক্তির পর্যালোচনার বিষয়ে নতুন আলোচনার প্রস্তাব দেওয়াসহ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ভারতের উচিত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা, যাদের সঙ্গে দেশটির তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ থেকে গত ১৫ বছরে সম্ভবত হাজার হাজার কোটি ডলার অবৈধভাবে সরানো হয়েছে। বেশির ভাগ সম্পদ গেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যে। এসব দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ এবং ব্যাংক, আইনজীবী, আবাসন ব্যবসার এজেন্ট ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পরিষেবা দাতারা এসব অর্থের উৎসের বিষয়ে যথাযথভাবে খোঁজ নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এসব বিনিয়োগকারীর রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় এ নিয়ে যথাযথভাবে খোঁজ নেওয়াটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এসব দেশের কর্তৃপক্ষের এখন হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পাচার করা অর্থ জব্দে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কাজ করার দায় আছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধারে দেশগুলোর সহায়তা করা উচিত, যাতে তা বাংলাদেশের সঠিক মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া যায়, তা সরকারি বা বেসরকারি খাত হোক না কেন। এই পদক্ষেপ ব্যাংকের সম্পদের ভিত তৈরি করে আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল করতেও অবদান রাখবে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া এক প্রজন্মে একবার মিলে, এমন রাজনৈতিক নবযাত্রার সুযোগ তৈরি করেছে। এটি বিগত পাঁচ দশকের বেশির ভাগ সময় ধরে চলা তিক্ত বিভাজন ও সহিংসতা থেকে দেশটিকে বের করে আনতে পারে। সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শক্তিশালী জনসমর্থন এবং ছাত্রনেতা ও সেনাবাহিনীসহ মূল পক্ষগুলোর সমর্থন রয়েছে। বড় দলগুলোও বলেছে, সংস্কারের জন্য তারা নির্বাচন পেছাতে ইচ্ছুক। অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছে, একটি প্রক্রিয়ার রূপরেখা দিয়েছে এবং একটি প্রাথমিক সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। যদিও এই সংস্কারপ্রক্রিয়া যেসব ঝুঁকি তৈরি করবে, সেসব ভীতিকর। অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ যাতে এ সরকারের পেছনে দৃঢ়ভাবে থাকে, তা নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ফলাফল দৃশ্যমান করতে হবে। এর বিকল্প বাংলাদেশ ও এর অংশীদারদের কারও জন্যই সুখকর হবে না। ভবিষ্যৎ সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্য রাখার মতো সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন হলে আরেকটি স্বৈরশাসনের উত্থান হতে পারে। আর সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ হবে আরও বড় ধাক্কা। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর উচিত, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলোকে সমর্থন দিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করা এবং বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি নতুন যুগে নিয়ে যেতে সহায়তা করা।