আবুল কালাম আজাদ
খালেদা জিয়া | ফাইল ছবি |
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক যুগ পর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে ছয় বছরেরও বেশি সময় পর তাকে প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল। নানা রোগে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে টানা আন্দোলন করেছে বিএনপি।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি | ফাইল ছবি |
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপির অন্যতম বড় দাবি ছিল খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো। তবে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাননি। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার পেছনে স্বাস্থ্যগত দিক যেমন রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে বলে আলোচনা চলছে।
এই ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি কেবল স্বাস্থ্যগত নয়। তিনি বলেন, 'তিনি তো এখন মুক্ত। সুতরাং তিনি যে কোনো সময় বাইরে যেতে পারেন। তিনি যদি বাইরে যেতে দেরি করেন বা না যান, তাহলে বুঝতে হবে এর পেছনে কোনো না কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।'
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ছবি: ফেসবুক |
বিএনপির তৃণমূল এবং দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকের চাওয়া হচ্ছে, অনিবার্য না হলে খালেদা জিয়া দেশেই থাকুন। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন হবে—এমন অবস্থানের কারণে বিএনপির অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।
মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তার বিদেশ যাত্রার পেছনে একটি 'ভিন্ন রাজনীতি' রয়েছে। খালেদা জিয়াকে নিয়েই তো বিএনপির রাজনীতি। তিনি যদি দৃশ্যপট থেকে সরে যান, তাহলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে। যতদিন বেগম জিয়া দৃশ্যপটে আছেন, ততদিন তিনিই বিএনপির রাজনীতির কেন্দ্র। সুতরাং তার উপস্থিতি দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
রাজপথে কর্মসূচী পালন করেছিল বিএনপি | ফাইল ছবি |
তিনি বলেন, বলেন, 'সেজন্যই হয়তো তিনি ভাবছেন বা তার দল ভাবছে যে তিনি যাবেন কি না। এর মধ্যেও রাজনীতি রয়েছে। বিএনপির রাজনীতিতে খালেদা জিয়া এখন সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস। এই তাসটা তারা হারাতে চাইবে না।'
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, নয়াপল্টনে সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি ও দ্রুত বিদেশে পাঠানোর আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর | ফাইল ছবি |
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। বিদেশে দীর্ঘ যাত্রার জন্য খালেদা জিয়ার শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত। ওনার একাধিক শারীরিক সমস্যা আছে। কাজেই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই পরিকল্পনা করতে হয়।'
১৪ অক্টোবর ২০২৩, বিজয়নগরে ১২ দলীয় জোটের গণঅনশন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি | ফাইল ছব |
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, 'আমরা ইচ্ছা করলেই অন্য রোগীর মতো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এনে তিন ঘণ্টায় সিঙ্গাপুর বা ব্যাংককে নিয়ে যেতে পারি না। ইস্যুটা এমন নয়। উড়ান শুরু থেকে নামা পর্যন্ত পুরো যাত্রায় বিশেষ চাপ ঠিক রাখতে হবে। ডাক্তাররা সবকিছু বিবেচনা করেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শারীরিক অবস্থা যাওয়ার মতো হলেই ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের জানাব' বলেন তিনি।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সামনে আইনজীবীদের ইউএলএফের প্রতিবাদী কর্মসূচি | ফাইল ছবি |
এদিকে দলীয় প্রধানের বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সতর্ক বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে গিয়ে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানান দলের মুখপাত্র ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, 'দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়ার সমস্ত আয়োজন মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে। তবে দূরপাল্লার যাওয়ার মতো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করতেই কিছুদিন বিলম্ব হয়েছে। আশা করি ইতোমধ্যে ব্যবস্থা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তিনি যেতে পারবেন। প্রথমে তিনি যুক্তরাজ্যে যাবেন এবং সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পরে তার চিকিৎসক দলের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
খালেদা জিয়া | ফাইল ছবি |
তিনি আরও বলেন, 'উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন এবং সেজন্য সরকারি পর্যায় থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই।'