প্রতিনিধি ভোলা

মেঘনা নদীর ইলিশা এলাকায় বালু তোলার প্রস্তুতি চলছে। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভোলার মেঘনা নদীর বালুমহালে বালু নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিনভর ইলিশা-কাচিয়া জলসীমানায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ হয়। পরে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

এর আগে চলতি মাসের প্রথম দিকে উপজেলা প্রশাসন বালুমহালগুলো পরিদর্শন করে। তখন বিএনপির এক পক্ষ প্রশাসনের লোকজনকে মারধর করে। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোলা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তবে জিডিতে হামলাকারীদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

বালুমহালে সংঘর্ষের বিষয়ে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ বলেন, "সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হননি। এ জন্য কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। গতকালের ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগও দেননি।"

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর ইলিশা-কাচিয়া জলসীমানায় প্রশাসন ১৪২৮ সন (বাংলা) থেকে চারটি বালুমহাল ঘোষণা করে। বাংলা ১৪৩১ সনে ২ ও ৩ নম্বর ইজারা পেয়েছেন যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে শামীম মাস্টার। ৪ নম্বর মহালের ইজারা পেয়েছেন আবুল হাসনাত (ইভান)। দরপত্রে ১ নম্বর মহালের জন্য ইজারাদার পাওয়া যায়নি। তবে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন বাড়ছে। এ ছাড়া মা ইলিশের প্রজনন, জাটকার বেড়ে ওঠা ও জাটকা সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। এসব কারণে জেলে ও নদীর দুই পারের মানুষ বালুমহাল ইজারা দেওয়ার আপত্তি জানিয়েছেন। এ জন্য তাঁরা মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সমর্থক ইজারাদার আত্মগোপনে গেলে বিএনপির লোকজন বালুমহালগুলোর দখল নেন। পরে ইজারাদার আনোয়ার হোসেনের মহালগুলো কিনে নেন দৌলতখান উপজেলা বিএনপির সমন্বয়ক আকবর হোসেন ও তাঁর লোকজন। আবুল হাসনাতের ৪ নম্বর মহালটি কিনে নেয় জেলা বিএনপির জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ (ট্রুম্যান) ও হুমায়ুন কবীর (সোপান) পক্ষ।

হারুন অর রশিদ পক্ষের দাবি, "তারা বালুমহালের ইজারাদার আবুল হাসনাতের কাছ থেকে ৪ নম্বর বালুমহালটি কিনে নিয়েছে। আকবর হোসেনের ২ নম্বর মহালে বালু কম। এ জন্য তারা ৪ নম্বর মহালে জোর করে ঢুকে বালু তুলতে চাচ্ছে। আকবর হোসেন ও তাঁর লোকজন সকাল ১০টার দিকে হামলা করেন। ৭-৮টি স্পিডবোটে সন্ত্রাসীরা ৪ নম্বর মহালে ৫ জনকে পিটিয়ে জখম করে। এসব স্পিডবোটের নেতৃত্বে ছিল সকেজ জামাল বাহিনী। তারা অস্ত্রের মুখে বালু তোলা শুরু করে। পরে কোস্টগার্ড গিয়ে পরিস্থিতি ঠান্ডা করে।"

তবে বালুমহালে হামলা ও মারধরের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান আকবর হোসেন। তিনি বলেন, "নিরাপদে বালু তোলার জন্য তাঁরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর চিঠি দিয়েছেন।"

বাংলা ১৪৩১ সনে ২ ও ৩ নম্বর ইজারা পেয়েছেন যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে শামীম মাস্টার। ৪ নম্বর মহালের ইজারা পেয়েছেন আবুল হাসনাত (ইভান)। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সমর্থক ইজারাদার আত্মগোপনে গেলে বিএনপির লোকজন বালুমহালগুলোর দখল নেন।

ওই চিঠিতে আকবর হোসেন লিখেছেন, "প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বৈধভাবে তাঁরা বালু উত্তোলন করতে যান। তিনি মেঘনা নদীর বালুমহালের ৩ ও ২ নম্বর বালুমহালের মূল ইজারাদার আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে স্টাম্পে লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বালু তোলার মালিকানা লাভ করেছেন। চুক্তিপত্রের শর্তমতো তাঁর লোকজন ৬ নভেম্বর বালুমহাল থেকে বালু তুলতে যান। তবে ৭ নভেম্বর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ ও হুমায়ুন কবির পক্ষ দলের নাম ভাঙিয়ে ৩ ও ২ নম্বর বালুমহাল বেদখলের পাঁয়তারা করে। তারা অবৈধভাবে তাঁর বালুমহাল দখল করে বালু উত্তোলন করেছে।"

আকবর হোসেন আরও জানান, "প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে গতকাল তাঁর লোকজন তাঁর মালিকানাধীন মহালে বালু তুলতে গিয়েছিলেন। অন্যের বালুমহাল দখল করার জন্য যায়নি।"

জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, "তিনি হামলা, সংঘর্ষ এসব বিষয়ে কিছু জানেন না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।"