প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরের হাজারী লেন এলাকায় দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে বিভিন্ন দোকান ও মার্কেটের তালা খুলে দেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চট্টগ্রামে ইসকন নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অরজিত খাস্তগীর, টিপু নন্দী, মিশু কর ও বলাই চক্রবর্তী। বুধবার রাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই ৫৩ জনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে যৌথ বাহিনীর পাহারায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার ওসমান আলী নামে হাজারী লেনের এক ব্যবসায়ীর দেওয়া ইসকনবিরোধী (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই পোস্টের প্রতিবাদে ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যক্তি হাজারী লেনে জড়ো হয়ে ওসমান ও তাঁর ভাইয়ের দোকানে আগুন দিতে উদ্যত হয়। এই উত্তেজনার মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। যৌথ বাহিনী তাঁদের দুই ভাইকে উদ্ধার করে। আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও কিছু ব্যক্তি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁরা জুয়েলারি কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর। এতে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ পুলিশের ১২ সদস্য আহত হন। এ সময় এক দল ব্যক্তি ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে। পরে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় যায়। এ সময়ও একদল ব্যক্তি আবার তাদের ওপর অ্যাসিডসদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করেন। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এ সময় ৮২ জনকে আটক করে নিয়ে আসে যৌথ বাহিনী। তাঁদের মধ্যে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানার এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। একই দিন ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় পোস্ট শেয়ারকারী ওসমান আলীকে।
মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনার পর থেকে হাজারী গলির দোকানপাট বন্ধ রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে বিভিন্ন দোকান ও মার্কেটের তালা খুলে দেন। তখন দোকানিরা তাঁদের দোকানে প্রবেশ করেন।
পরে
দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডে সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বাহিনীর
টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ সাংবাদিকদের
বলেন, "এটা ওষুধ ও স্বর্ণ ব্যবসার হাব। এটা এক দিনের জন্য বন্ধ ছিল। আমাদের
তদন্ত কার্যক্রমও চলবে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক চাকা যাতে স্থবির হয়ে না যায়,
সেটাও আমরা দেখছি। আজ থেকে সেটার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।"