শেয়ারবাজার | প্রতীকী ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি: খন্দকার রাশেদ মাকসুদ গত ১৯ আগস্ট যখন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৭৭৫ পয়েন্ট। বর্তমানে, এই সূচক ৫ হাজার ৫৫৩ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা ১৩২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৬ শতাংশের পতন নির্দেশ করে। এই পতন বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের যোগদানের পর এক দিনে সবচেয়ে বড়।

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিএসইসি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্প্রতি নেয়া পদক্ষেপগুলোকে এই পতনের জন্য দায়ী করছেন। আজ ডিএসইর ডিএসইএস সূচক ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ডিএস ৩০ সূচক ২ দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছে। নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেড় মাসে শেয়ারবাজারে কিছু উত্থান হলেও, অধিকাংশ সময় পতন ঘটেছে। এই সময়কালীন মোট পতন হয়েছে ৩২২ পয়েন্ট।

একদল বিনিয়োগকারী আজ ঢাকার মতিঝিল এলাকায় ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন এবং খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তারা বিএসইসির ভুল নীতির জন্য এই দরপতনের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দেন। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আজকের পতনের পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, গত মঙ্গলবার বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে চার প্রতিষ্ঠান ও পাঁচ ব্যক্তিকে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার বিমুখতা সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয়ত, এনবিআর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল কর্তৃক কিছু বড় শিল্পগোষ্ঠীর মালিকানা বদলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, যা বাজারে গুজব ছড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছুদিন শেয়ারবাজারে সূচকের উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল, কিন্তু এরপর থেকেই দরপতন অব্যাহত রয়েছে। নতুন বিএসইসি প্রশাসন কাজ শুরু করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আজ ঢাকা শেয়ারবাজারে মোট লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকার, যা আগের দিনের ৩৮৯ কোটি টাকার তুলনায় বেড়েছে। তবে, আজ মাত্র ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ৩৪৭টির দাম কমেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন স্বাভাবিক ঘটনা, তবে এর পেছনে অস্বাভাবিক কারণ রয়েছে কিনা তা দেখা উচিত। তিনি বলেন, সংস্কার হলে সব পক্ষকেই মূল্য দিতে হয় এবং নীতিনির্ধারকদের কাছে শেয়ারবাজারের অগ্রাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বড় দরপতনের দিনে আজ বিএসইসি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সভায় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, একটি সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়তে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে অবদান রাখতে হবে। বিএসইসি আরও জানিয়েছে, পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।