● নানা কারণে তাঁতের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

● পল্লির অভ্যন্তরে বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন স্থানীয়রা।

● এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ।

পাবনার ঈশ্বরদীতে বেনারসিপল্লি প্রকল্পের জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন রকম সবজি। সম্প্রতি শহরের ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে শুরু হওয়া বেনারসিপল্লি প্রকল্প ২০ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। তাঁতশিল্পের উন্নয়নকে লক্ষ্য করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের উদ্যোগে গৃহীত এই প্রকল্পের জমিতে বর্তমানে সবজি চাষ হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার তাঁতির আর্থিক সংকট নিরসন এবং বেনারসি শিল্পের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৯০-এর দশকে এই প্রকল্পটি পরিকল্পিত হয়। ২০০০ সালে ‘ঈশ্বরদী বেনারসিপল্লি’ নামে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ২ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় ৫.৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর আরও কিছু অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচীর, কার্যালয়, মসজিদসহ তাঁতিদের জন্য বিভিন্ন সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়। ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। তবে প্রকল্পটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

প্রকল্পটির ৯০টি প্লটের মধ্যে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কারখানা গড়ে ওঠেনি। সম্প্রতি চালু হওয়া ৫টি কারখানার মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে গেছে, আর বাকি চারটি কোনো রকমে চালু রয়েছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ইতোমধ্যে ১৪টি প্লট বাতিল হয়েছে এবং আরও ২২টি বাতিলের পথে রয়েছে। স্থানীয় তাঁতিরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিনের অদক্ষ পরিকল্পনা, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং সুষ্ঠু তদারকির অভাবে প্রকল্পটি কার্যকর হতে পারেনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের জমিতে বিভিন্ন সবজি, যেমন ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, শিম, করলা ইত্যাদির চাষ হচ্ছে। কার্যালয়ের অবস্থা বেহাল; জানালা-দরজার কাচ ভাঙা, দেয়ালের রং চটে শ্যাওলা জমে আছে, আর আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে পড়েছে। চারদিকে জঙ্গলাকীর্ণ পরিবেশ, দূর থেকে মাত্র ২-৩টি কারখানা দৃশ্যমান।

এলাকার এক নারী জানান, "এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা পল্লির জায়গায় সবজি চাষ করছি এবং এর জন্য মসজিদ উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বছরে কিছু টাকা দিই।"

এক কারখানার তাঁতি শরিফুল ইসলাম বলেন, "স্থায়ী কারখানা এখনো গড়ে ওঠেনি। যে কয়টি কারখানা আছে, সেগুলো আমরা নিজেদের টাকায় তৈরি করেছি। কিন্তু আর্থিক সংকটে এগুলো প্রায় সময় বন্ধ থাকে।"

ঈশ্বরদী বেনারসিপল্লির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামাল জানান, "প্লটগুলো তাঁতিদের বরাদ্দ দেওয়া হলেও, তাঁরা কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি এবং কারখানাও গড়ে ওঠেনি। বরাদ্দ পাওয়া তাঁতিরা পূর্ণাঙ্গ কারখানা তৈরির মতো অবস্থায় নেই এবং তাঁরা সরকারি ঋণের অপেক্ষায় আছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তারপর হয়তো নতুন নিয়মে প্রকল্পটি আবার শুরু হবে।"