গোলাম মর্তুজা অন্তু
গত ২০ অক্টোবর নবোদয় হাউজিংয়ের বি ব্লকের ৪ এ সড়কে তরুণীকে ঘিরে ধরে ছিনতাইয়ের একটি দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
দিনে-দুপুরে বড় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গোলাগুলি বা রামদা-চাপাতি হাতে প্রকাশ্যে ছোটাছুটি। কখনও ভোরে, কখনো দিনে দুপুরে ফাঁকা সড়কে ছিনতাই, কখনো বসে থাকা মানুষদের এসে কোপানো হচ্ছে।
এক তরুণীকে ঘিরে ধরে পাঁচজন টানা হেঁচড়া করে ছিনতাই করছে, ওড়না টেনে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে, তরুণী দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন।
রাজধানীর মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদপুরের এসব ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মানুষ আঁৎকে উঠছে। সামাজিক মাধ্যমেই কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।
গত অগাস্টে রাজনীতির পট পরিবর্তনের পর হঠাৎই যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে এলাকাটি।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আড়াই মাসে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় অন্তত সাতজন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিতে, ছুরিকাঘাতে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনা আছে।
গুলিতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ছয় জন। দিনে দুপুরে ছিনতাই হচ্ছে, চলন্ত গাড়ি থামিয়েও কোম্পানির টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে, হচ্ছে ‘গ্যাং ফাইট’।
মোহাম্মদপুর হঠাৎ কেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠল?
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে আছে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের জেনিভা ক্যাম্প। শেখ হাসিনার পতনের পর থানা ও গণভবন থেকে লুটের অস্ত্র জেনিভা ক্যাম্পের অপরাধীদের হাতে যাওয়ার তথ্য রয়েছে।
দিনে দুপুরে দোকানের মধ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলার এমন ঘটনা মোহাম্মদপুরে এখন প্রায়ই ঘটছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এসব অস্ত্র হাতে পেয়ে সেখানকার বিবদমান মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়েছে। জেনিভা ক্যাম্প ছাড়াও ওই থানা এলাকার অপরাধপ্রবণ এলাকা হল বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন বসিলা, রায়ের বাজার, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকা।
মোহাম্মদপুর বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলোতে আবাসন তুলনামূলক সস্তা। অনেক উঠতি অপরাধীর আবাসস্থল হয়ে উঠেছে ওই এলাকা। সেখানে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি, ফুটপাথ দখল ও চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে অপরাধীদের চক্রগুলো।
পুলিশ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা তাদের জন্য অনেকটা দুঃসাধ্য। সাধারণ পুলিশিং দিয়ে এটা সামাল দেওয়া ‘প্রায় অসম্ভব’।
জেনিভা ক্যাম্প তো অনেক আগে থেকেই অপরাধপ্রবণ। অল্প একটা জায়গা মানে ১৫ একর জায়গায় ৫৫ হাজার লোক গাদাগাদি করে বসবাস করছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঘটনাক্রম
৬ অগাস্ট: জেনিভা ক্যাম্পে মাদকের দ্বন্দ্বে গুলিতে নিহত শাহেন শাহ।
৪ সেপ্টেম্বর: জেনিভা ক্যাম্পে আবার মাদকের দ্বন্দ্বে গুলিতে নিহত রিকশাচালক সনু।
২০ সেপ্টেম্বর: সাদেক খান আড়তের কাছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, জোড়া খুন। নিহত নাসির ও মুন্না।
১০ অক্টোবর: চুরির সময় আটকের জেরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ঢাকা উদ্যানের নৈশ প্রহরী রবিউল ইসলামকে হত্যা।
১৬ অক্টোবর: জেনিভা ক্যাম্পে আবারও গুলি, নিহত শাহনেমাজ বা শাহনেওয়াজ।
১৭ অক্টোবর: বসিলায় চোর সন্দেহে অটোরিকশা চালক শাহরিয়ার আশিককে পিটিয়ে হত্যা।
আরও ঘটনা
১৮ অক্টোবর: বাজার কমিটির দ্বন্দ্ব নিয়ে শিয়া মসজিদ কাঁচাবাজারের সভাপতি আবুল হোসেন ও তার ভাই মাহবুব হোসেনকে গুলি।
২০ অক্টোবর: মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডের রাস্তায় সকাল ১০টায় নেসলের পিকাপ ভ্যানে হামলা চালিয়ে ১২ লাখ টাকা লুট।
৭ সেপ্টেম্বর ভোরে মোহাম্মদপুরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে রিকশা আরোহীর ওপর ছিনতাইকারীদের হামলার এই দৃশ্য সিসিটিভি ভিডিওতে ধরা পড়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গত ২০ অক্টোবর নবোদয় হাউজিংয়ের বি ব্লকের ৪ এ সড়কে তরুণীকে ঘিরে ধরে ছিনতাইয়ের একটি দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দিনে দুপুরে পাঁচ তরুণ ধারালো অস্ত্র নিয়ে তরুণীর ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি দিতে না চাইলে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাদের। এক পর্যায়ে পরনের ওড়না টেনে তাকে মাটিতে ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা। এ সময় তরুণী ব্যাগ ফেলে ভয়ে দৌড় দেন।
৪/এ সড়কের একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, ওই তরুণী কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসার পর কিছু লোক জড়ো হয়। তখন তিনি রিকশা নিয়ে চলে যান, তার নাম, ঠিকানা জানা যায়নি।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলছেন, “আমি ওসি সাহেবের সঙ্গে কয়েকটা মিটিং-সিটিং করলাম। কিন্তু এমন অপরাধ কেন হচ্ছে এগুলোর সম্পর্কে আসলে আমার কিছু বলার নেই। কেন হচ্ছে, কী হচ্ছে আপনারা যারা সংবাদ লেখেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরাও ভীত-সন্ত্রস্ত।”
‘একেবারে রাম রাজত্ব’
বসিলা এলাকার একজন আবাসন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, “গত এক বছর ধরে স্থানীয় গ্যাংগুলো প্রকাশ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছিল। অগাস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর সব যেন ‘খুল্লাম খুল্লা’। এখানে ফিউচার টাউন হাউজিংয়ে আলম, বিল্লাল, মন্টি, মুন্না, হামিম এদের একটা গ্রুপ আছে। এদের দলনেতা আলমের বিরুদ্ধে মাদক মামলা আছে।
“আগে আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক এদের নিয়ন্ত্রক ছিল। এখন এদের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে গেছে। তবে যাই হোক, এরা একেবারে দিনে-দুপুরে যা ইচ্ছা তা করছে। যখন তখন সাইটে (নির্মাণাধীন ভবন) ঢুকে একেবারে ছাদে উঠে যাচ্ছে। রড-সিমেন্ট, মিস্ত্রিদের জিনিসপত্র ট্রাকে বা ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছে; একেবারে রামরাজত্ব যাকে বলে।”
এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, আলম-বিল্লালদের গ্রুপের আবার একটা প্রতিপক্ষ গ্রুপ থাকে পাশের চাঁদ উদ্যানে। মাঝে মধ্যেই সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এলাকায় এরা ‘নারকীয় পরিবেশ’ তৈরি করে রেখেছে মন্তব্য করে ওই আবাসন ব্যবসায়ী বলেন, “এখানে এখন অনেক রেডি ফ্ল্যাট ভাড়া হয়নি। অবস্থা এমন হয়েছে যে, যারা এখানে ভাড়াটে হিসেবে উঠেছিলেন, তাদের অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন, কেউ ছাড়ার কথা ভাবছেন। ফ্ল্যাট বিক্রি নিয়ে চিন্তায় অনেক ডেভেলপার ব্যবসায়ী।”
ফেইসবুক গ্রুপ ‘আমরা মোহাম্মদপুরবাসী’তে খন্দকার রাফি নামের একজন লিখেছেন, গত ১৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টায় বসিলা ৪০ ফিট সড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হন তার সঙ্গে একই বাসায় থাকা দুইজন।
“তিনজন হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে হেঁটে বাসায় আসতেছেন। হঠাৎ করে পেছন থেকে ৯/১০ জন অল্প বয়সী টোকাই, নেশাগ্রস্ত- প্রত্যেক জনের হাতেই বড় বড় ধারালো অস্ত্র, এগুলো দিয়ে ২ জনের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। আর একটু সামনে থাকা আরেকজন এগুলো দেখেই দৌড় দিয়েছেন। তাদের ২ জনের কাছে থাকা দুইটা মোবাইল ফোন, পকেটে থাকা প্রায় ৯ হাজার টাকা সব কিছু কেড়ে ছিনতাই করে নিয়ে যায়।”
মোহাম্মদপুর থানা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পুলিশ বলছে ‘দুঃসাধ্য’
প্রকাশ্যে ছিনতাই-খুন হচ্ছে, পুলিশ কী করছে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার হাসান নিজেই অপরাধ বর্ণনার ঝাঁপি খুলে বসেন।
তিনি বলেন, “এখানে অপরাধ প্রবণতা বেশি। এখানে এমনিতেই অনেক অপরাধ হয়। এলাকার যদি কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখেন তাহলে মনে হবে যে তিন বন্ধু চা খাইতে যাচ্ছে, সামনে একজনকে পেল তো ছিনতাই করে ফেলল। হুদাই অপরাধ। অন্য জায়গায় এরকম অপরাধ কল্পনাও করা যায় না।
“একটা মহল্লার ভেতরের রাস্তা দিয়ে একজন যাচ্ছেন, দুই পাশে শত শত বাড়ি, এর মাঝে তিন কিশোর এসে তাকে ছিনতাই করে চলে গেল। এটা তো বাংলাদেশের অন্য জায়গার সিনারিওর সঙ্গে মেলে না। এই সিনারিও বাংলাদেশের আর কোথাও পাবেন না।”
নিয়মিত পুলিশিং করে মোহম্মদপুর সামাল দেওয়া সম্ভব নয় ইঙ্গিত দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “রেগুলার পুলিশিংয়ের মধ্যে যা করার করছি। কিন্তু সমস্যা হল মোহাম্মদপুর হচ্ছে একটা ক্রাইম হাব। ক্রাইম ও ক্রিমিনালের জন্মের জন্য যে আদর্শ পরিবেশ দরকার, তা এখানে তৈরি রয়েছে। এটা ভৌগোলিক বা ইতিহাসগত কারণে হয়েছে।
“জেনিভা ক্যাম্প তো অনেক আগে থেকেই অপরাধপ্রবণ। অল্প একটা জায়গা মানে ১৫ একর জায়গায় ৫৫ হাজার লোক গাদাগাদি করে বসবাস করছে। এখানে ক্রাইম ছাড়া তো ভালো কিছু হতে পারে না।”
মোহাম্মদপুরকে নিয়ে ‘বিশেষভাবে’ চিন্তা করতে হবে মত দিয়ে তিনি বলেন, “উচ্চ মহলে যারা নীতিনির্ধারক, তাদের ভাবতে হবে এখানে কী করা যায়। দরকার হলে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসতে হবে, সমাজ বিজ্ঞানী, অপরাধ বিজ্ঞানী নিয়ে আসতে হবে। রেগুলার পুলিশিং দিয়ে এই অপরাধ প্রতিরোধ করা দুঃসাধ্য।”
রায়েরবাজারের ভিন্ন বাস্তবতার উদাহরণ দিয়ে ওসি বলেন “এলাকাটা একটা স্যাটেলাইট টাউন হিসেবে গড়ে উঠছে। এখানে একটা জেলার (ভোলা) একটা থানার (ইলিশা) লোকজনের বসবাস বেশি। এতে করে সামাজিক যে ভারসাম্য সেটা এখানে নাই। এখানে একটা থানার লোক ডমিনেট করতেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা হয়ে পড়েছে সংখ্যালঘু। যেমন কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা আসার পরে ডেমোগ্রাফি চেঞ্জ হয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ করতেছে আর স্থানীয় বাসিন্দারা সরে আসতেছে।
“এখানেও সেটেলারদের অত্যাচারে স্থানীয় বাসিন্দারা কোণঠাসা। তারা অপরাধটাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করছে। এটা এখন সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাই।”
গত ২১ অক্টোবর মোহাম্মদপুরে দিন-দুপুরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থেকে ১২ লাখ টাকা ছিনতাই হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পুলিশের লোকবল সংকট
মোহাম্মদপুর থানা আয়তন ও জনসংখ্যায় ডিএমপির সবচেয়ে বড়। থানা মনে করে, তাদের লোকবল এমনিতেই কম। পুলিশ সদস্যদের বদলিজনিত কারণে বরাদ্দেরও অন্তত ৪০ শতাংশ কম লোকবল দিয়ে চলতে হচ্ছে।
পুলিশের পাশাপাশি থানায় ৩১ জন আনসার সদস্য ছিলেন, এদের সবাই চলে গেছেন, তাতে থানার শক্তি আরো কমেছে।
ওসি বলেন, “এখন এমনিতেই পুলিশের জনবল কম। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকের ওয়ার্কিং আওয়ার বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। আমাদের এখন রীতিমতো জীবন বাজি রেখে কাজ করতে হচ্ছে।
“ওসি হিসেবে আমি দিনে ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমাতে পারি। বাকি সময়ের বেশিরভাগটা রাস্তাতেই কেটে যায়। আমরা প্রতিরোধমূলক সব রকম ব্যবস্থাই নিচ্ছি। টহল জোরদার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা জেনিভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করেছি। মাদক উদ্ধার করেছি। গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।
‘সামাজিক প্রতিরোধের দিকে’ জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে ওসি বলেন, “দুঃখজনক হচ্ছে, কমিউনিটি থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না। লোকজন ভয় পাচ্ছে, মানুষের ভীতি এখনো কাটছে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করলেও তারা আতঙ্কের শিকার হতে পারে এরকম ভীতি তাদের মধ্য থেকে যাচ্ছে না। আমি তাদের সাহস যোগাচ্ছি। এখন অবশ্য রাস্তার ওপর পুলিশ ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করলে কিছু মানুষ এগিয়ে আসছে।”
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জিয়াউল হক বলছেন, “ভাই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রাতের বেলায় আমার ডিসি স্যারসহ আমরা ছিনতাইকারী ধরতে দৌড়াচ্ছি। কিন্তু আমাদের এখনো ফোর্স কম, সরঞ্জাম কম। তবে বলা যায়, অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
‘যুবক গ্যাং’
মোহাম্মদপুর থানা এলাকার কিশোর অপরাধে জড়িত বেশ কয়েকটি চক্রের কর্মকাণ্ড গত কয়েক বছর ধরেই ছিল আলোচিত। এসব দল সাধারণভাবে ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। তাদের অনেকেই এখন পরিণত বয়সে অপরাধকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
মোহাম্মদপুরের সেই কিশোর গ্যাংগুলোর কী অবস্থা জানতে চাইলে ওসি বলেন, “ওই কিশোররা এখন যুবক হয়ে গেছে। এখনো গ্যাং আছে, কিন্তু কিশোররা আর কিশোর নাই। এখন কিশোর গ্যাং যদি বলেন এই ছিনতাই অপরাধের ২০ শতাংশ কিশোররা, বাকি করছে যুবকেরা।”
জেনিভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের বিভিন্ন পক্ষের গোলাগুলির খবর প্রায়ই আসে সংবাদমাধ্যমে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মামলা-গ্রেপ্তারের চাপ
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ ও মোহাম্মদপুর থানার একাধিক কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর যে রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন, তারা তাদের প্রতিপক্ষকে ‘শায়েস্তা করার তালে’ আছেন।
“প্রতিদিনই তারা জুলাই-অগাস্টের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় যাকে-তাকে গ্রেপ্তারের তদবির নিয়ে আসছেন। ফোন আসছে অনেক,” বলেন এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “একেকটা মামলায় প্রচুর আসামি। বাদী তাদের মধ্যে হয়ত শেখ হাসিনা বা দুই-একজন মন্ত্রীকে চিনতে পারেন। কিন্তু তাদের আসলে নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় কিছু নেতা। ওই নেতারা তাদের দলের প্রতিপক্ষ নেতাদেরও গ্রেপ্তার বা শায়েস্তা করার জন্যও চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি ঘণ্টায় ফোন আসছে- একে ধরেন, ওকে ছাড়েন ইত্যাদি তদবির নিয়ে। এদিকে এলাকার অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে, আমরা কমিউনিটির কোনো সাপোর্ট পাচ্ছি না।”
মোহাম্মদপুর থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, “রায়েরবাজার সাদেক খান আড়তের ওখানে যে জোড়া খুন হয়েছে, সেই মামলায় সেখানকার লোকেরাই শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের নাম দিয়েছে। এখন আবার তারাই তদবির করছে পিচ্চি হেলালকে না ধরার জন্য, তিনি নাকি ছাত্রদল করেন।
“বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, তবে তারাও কোনো নির্দেশনা দেননি। এখন এই অবস্থায় আছে মামলার তদন্ত।”