প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

দীর্ঘ দুই বছর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদের (টুকু) নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশের মঞ্চ ভেঙে ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের স্টেশনবাজার এলাকায় নতুন সড়কে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় বিকেল সাড়ে চারটায় সমাবেশ শুরু হয়। জেলার সব উপজেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে দুপুর থেকে সমাবেশে যোগ দেন। প্রথম বক্তা কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চ ভেঙে পড়ে। মঞ্চে প্রধান অতিথি ইকবাল হাসান মাহমুদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আহতদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া টুটুল, কোষাধ্যক্ষ রাশেদ খান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ছানোয়ার হোসেন, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীরসহ অন্তত ১২ জন। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে মঞ্চ ভেঙে পড়ার পরের চিত্র। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মঞ্চ ভেঙে পড়ার পর ইকবাল হাসান মাহমুদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে সমাবেশ শেষ করেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি ৭ মার্চ জাতীয় দিবস বাতিলের প্রসঙ্গে বলেন, "৭ মার্চ কোনো ঐতিহাসিক মাইলফলক নয়। ওই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে 'জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান' বলা হয়েছিল। তাই ইতিহাস নিয়ে বেশি খোঁচাখুঁচি করবেন না। বেশি খোঁচালে আসল রহস্য বেরিয়ে পড়বে। ইতিহাস জীবন্ত এবং কাউকে ক্ষমা করে না।"

তিনি আরও বলেন, "আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। আমাকেও দুই বছর দেশে থাকতে দেওয়া হয়নি। অনেকে বলেছে, আমি পালিয়ে গেছি, কিন্তু তা সত্য নয়। আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, আমি আওয়ামী লীগের কোনো জেলে জেল খাটব না। আওয়ামী লীগ জানত, আমি কোথায় আছি, কী করছি।"

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে ইকবাল হাসান বলেন, "তোমাদের মতো ইঁদুরের গর্তে পালাইনি। এখন তো গরম পানি দিয়েও তোমাদের বের করা যাচ্ছে না।"

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, "আমার পরিবার ১০০ বছর ধরে রাজনীতি করে। আমার বাবার সঙ্গেও আওয়ামী লীগ দুর্ব্যবহার করেছে। আমার বাড়ির সামনে মহড়া দিয়ে আমাকে গালাগালি করেছে। আওয়ামী লীগের নেত্রী দেশ রক্তে রঞ্জিত করে পালিয়ে গেছেন। বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের নেত্রীসহ সবার বিচার হবে। আগামী ৫০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না।"

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে অতিরিক্ত নেতা–কর্মীদের চাপে মঞ্চ ভেঙে পড়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ইকবাল হাসান বলেন, "অতি উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সংগ্রাম কেবল শুরু হয়েছে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। যাঁরা খারাপ ব্যবহার করবেন, তাঁরা বিএনপির কর্মী নন, আওয়ামী লীগের এজেন্ট।"

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে ইকবাল হাসান গত দুই বছর দেশে ছিলেন না। ৬ অক্টোবর দেশে ফিরে তিনি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আজ তিনি সিরাজগঞ্জে আসেন এবং ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।