প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপহার দেওয়া প্রতিমার সোনার মুকুটটি চুরি হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া উপহারের স্বর্ণের মুকুটটি চুরি হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার ঈশ্বরীপুর মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে কালীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মির্জা আমিনুর রহমানসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দও ঘটনাস্থলে আসেন।
এদিকে মন্দিরে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে মুকুট চুরি দৃশ্য ধরা পড়েছে। জিনসের প্যান্ট ও হাফহাতা সাদা টি–শার্ট পরিহিত এক যুবক মন্দিরে প্রবেশ করেন। মুহূর্তের মধ্যে কালক্ষেপণ না করে কালীপ্রতিমার পেছন থেকে মুকুট খুলে টি–শার্টের মধ্যে ঢুকিয়ে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যশোরেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিতে আসেন। এ সময় তিনি উপহার হিসেবে নিজ হাতে মূল্যবান ওই সোনার মুকুটটি কালীপ্রতিমার মাথায় পরিয়ে দেন।
স্থানীয়রা জানান, বেলা দেড়টার কিছু পরে পুরোহিত মন্দিরে তালা লাগিয়ে নিজ বাড়িতে যান। পরবর্তী সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেখা রানী পুরোহিতের দেওয়া চাবি দিয়ে তালা খুলে মন্দিরের মধ্যে থাকা জিনিসপত্র পরিষ্কারের জন্য বাইরে নিয়ে যান। প্রায় তিন মিনিট পরে রেখা রানী মন্দিরে ঢুকে কালীপ্রতিমার মাথায় মুকুট দেখতে না পেয়ে হইচই শুরু করেন। এরপর স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
তাঁরা জানান, শ্রীশ্রী যশোরেশ্বরী মন্দিরে কালীপ্রতিমার একান্ন খণ্ডের এক খণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। দেশ–বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী এ মন্দির দর্শনে আসেন। অনেক ধন–সম্পদ ও আর্থিক অনুদানের কারণে মন্দিরের সেবায়েত নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে কোনো পক্ষ মন্দিরের নিরাপত্তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পনামতো এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
তাঁরা অভিযোগ করেন, মন্দিরে কালীপ্রতিমার মাথার মুকুট চুরির পর পুরোহিতের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী ২টা ৪৯ মিনিটে মুকুট চুরির ঘটনা ধরা পড়লেও পুরোহিতের দাবি তাঁকে আড়াইটার দিকে ফোন করে চুরির বিষয়টি জানানো হয়। এমনকি মুকুট চুরির পর মন্দিরে এসে বারান্দায় বসে থাকলেও তিনি কালীপ্রতিমার পাশে যাননি বলে জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী জানান, "তিনি বাড়িতে যাওয়ার পর চুরির ঘটনা ঘটেছে। পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা রেখা রানীর কাছে তিনি চাবি দিয়ে গিয়েছিলেন দাবি করে বলেন, প্রতিদিন একইভাবে মন্দিরে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। আড়াইটার দিকে তাঁকে জানানো হলেও বাড়ি দূরে হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে সবাইকে জানানোর ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা বিলম্ব করেন বলে জানান তিনি।"
পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেখা রানী জানান, "তিনি চাবি দিয়ে খুলে কিছু ময়লা জিনিসপত্র পাশের কক্ষে রাখতে যান। দ্বিতীয়বার অন্য ময়লাযুক্ত জিনিস নেওয়ার জন্য ফিরে এসে গেট উন্মুক্ত দেখতে পাওয়ার পাশাপাশি মুকুট চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন।"