প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন, যার একটি গান পরিবেশন নিয়ে সমালোচনা চলছে | ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের জেএম সেন হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছেন একদল তরুণ। এই ঘটনার জন্য ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্যদের দায়ী করা হয়েছে, যদিও তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জানা গেছে, পূজা উদযাপন কমিটির একজন নেতার আমন্ত্রণে সংগঠনটি পূজামণ্ডপে গান করতে যায়। তবে গান পরিবেশনের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সংগঠনটিকে জামায়াত ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত দাবি করেছেন, কিন্তু জামায়াত এ বিষয়ে তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছয়জন সদস্য মঞ্চে উঠেন। তারা শাহ আবদুল করিমের লেখা ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’—এই দুটি গান পরিবেশন করেন। বিশেষ করে ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’ গানটির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল জানিয়েছেন, "তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না, তবে শুনেছেন সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে সংগঠনটি গান পরিবেশন করেছে। সংগঠনটি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, এ বিষয়ে তার জানা নেই।

চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান বলেন, "তারা পূজা উদযাপন পরিষদের সজল দত্তের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলেন এবং দুটি সম্প্রীতির গান পরিবেশন করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, কিছু পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টিকে ঘোলাটে করছে। তিনি দাবি করেন, তাদের সংগঠন জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেছেন, "গানের দলের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই এবং গান পরিবেশনকালে সেখানে জামায়াতের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।"

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, "যারা ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছেন, তারা পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে এসেছিলেন এবং পূজা উদযাপন পরিষদের অনুমতি নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেছেন। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে এ সম্পর্কে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে যদি অভিযোগ পাওয়া যায়।"

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচজন তরুণ ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’ গানটি পরিবেশন করছেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই এটিকে ফেক দাবি করেছিলেন, কিন্তু পরে তার সত্যতা প্রকাশিত হয়।

এএফপির ফ্যাক্টচেক ইউনিটের কদরুদ্দিন শিশির জানিয়েছেন, "স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংস্কৃতিক সংগঠন জামায়াতপন্থি কর্মীদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত, কিন্তু পূজা উদযাপন কমিটির অন্য সদস্যরা তাদের আমন্ত্রণের বিষয়ে জানতেন না। আশিস দে নামের এক নেতা এই ঘটনায় সজল দত্তকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।"

অধ্যাপক সুমন রহমান বলেছেন, "দুইটি ভিডিও পাওয়া গেছে; একটি ভিডিওতে পুরো অনুষ্ঠান ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু ইসলামি গানটি সেখানে নেই। শেষ পর্যন্ত তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে ভিডিওটি অরিজিনাল এবং এডিটেড নয়।"