নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে বুধবার শুরু হল দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেবী প্রতিমাকে প্রণাম করছেন এক যুবতী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ ও কাসর ঘণ্টার আওয়াজে শুরু হল বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।

বুধবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠী পূজার আয়োজন করা হয়।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী জানান, "সংকল্প ও আরম্ভ দুই মিলিয়ে হয় 'কল্পারম্ভ'। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সমস্ত নিয়ম মেনে পূজার্চনা করা হবে। দেশ ও বিশ্বে ‘অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য ও বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করা হয় এই সময়।"

পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বলেন, "শাস্ত্র মতে, দুর্গা এবার মর্তে এসেছেন দোলায় চেপে, ফিরবেন ঘোড়ায়।"

হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবী দুর্গা। তাঁর আগমন ও প্রস্থানের মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।

পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বুধবার পুণ্যর্থীরা। শুরু হল ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মহালয়ার মাধ্যমে ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওই দিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধরায় আসেন। সন্তানদের নিয়ে কিছু দিন পিতৃগৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে।

ষষ্ঠী পূজার আগে মঙ্গলবার হয় বোধন বা দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা। এরপর বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী, শুক্রবার মহাঅষ্টমী এবং শনিবার মহানবমী। এবারের মহানবমী পূজার পরেই দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে। এক বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তাঁর স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব পালন করা হয়।

রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজাকে শারদীয় দুর্গা পূজা বলা হয়। দেবীর ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন।

প্রণব চক্রবর্তী জানান, "স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে দেবী মর্ত্যে তাঁর পিতৃগৃহে পদার্পণ করেছেন। এই সফরে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, ও কার্তিকের কলা বউ।"

ষষ্ঠীর দিন সকালে ‘দুর্গা মায়ের’ মুখ উন্মোচন করা হয় এবং এ সময় লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে দেবী দুর্গা মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভোর থেকেই পূজার আয়োজনের ব্যস্ততা দেখা যায়। দেবীর আরাধনায় ভক্তরা ভিড় করেন সেখানে।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ষষ্ঠীতে সাধারণত মেয়েরা এসে সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। সন্তানেরা যেন মেধাবী হয়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন এবং যাঁদের সন্তান নেই, তাঁরা সন্তানের আশা নিয়ে পূজা করেন।"

রাজিব চক্রবর্তী জানান, “এবার দেবী এসেছেন দোলায় চেপে। পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর ফলাফল হয় ‘মড়ক’, যা শুভ ইঙ্গিত নয়। খাদ্যশস্যে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হবে এবং রোগব্যাধি বাড়বে। এছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল হয় ‘ছত্রভঙ্গ’। এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়,” বলেন তিনি।

পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবারের পূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি।

ঢাকা মহানগরে এবারে ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে, গত বছর ছিল ২৪৮টি। এ হিসেবে মহানগরে পূজামণ্ডপ চারটি বেড়েছে।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জানান, “প্রস্তুতি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণে দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও পূজার্থীরা এবারে পূজার আয়োজন করতে পারেননি।"